অর্বাচীনের কথা
সার খাট পড়েছে, তার উপরে ধবধবে বিছানা পাতা। শুনলাম, চাষা গিন্নিরা সমবায়ের কাজে বেরলে, এটা তাদের ছেলে রেখে যাবার জায়গা। ছেলেরা বেশ খুশি মনে হামাগুড়ি দিয়ে বেড়াচ্ছে।
আমায় দেখে দাই এগিয়ে এসে অনেক গল্প করলে। হাসতে হাসতে বললে, প্রথম প্রথম ভারি আপত্তি উঠেছিল, ছেলেদিকে চাষী-প্রথামতো ঘোলে ভেজানো বাজরার রুটি না খাইয়ে খাঁটি দুধের উপর শুখিয়ে রাখা হচ্ছে।
আমার কাছে কিন্তু বড়ো হাসির কথা নয়। মনে পড়ে গেল ছেলে বেলার আদরিয়া (Adarya) গিরির কথা। তেরো বছরে তার তেরোটি ছেলে হয়ে সবকটি মারা যায়। অখাদ্য কাকে বলে, নোংরা কিসে হয় কিসে যায়, না জানার এই দুর্দশা। বেচারীর কাঁদতে কাঁদতেই জীবন কেটেছিল।
স্কুলবাড়ি ছাড়িয়ে আর একটু যেতে, ঠিক যেখানটায় আমাদের বাড়ি ছিল, সেখানে দেখি সাজসরঞ্জাম সমেত একটা দমকল ঘর। এ রকম সব খোড়ো চালের গ্রামে আগুন-লাগা কী সর্বনেশে কাণ্ড মনে করলে এখনো বুক কাঁপে। জলের যোগাড় নেই, একসঙ্গে চলাবলার অভ্যেস নেই; যে জল আছে এলোমেলো আপ্সাআপ্সীর চোটে তাও পৌঁছয় না; কেউবা বাধা দিয়ে বলে, দেবতার কোপ জলে শান্ত হবে না, দুধ চাই; ফলে, আগুন ঘরের পর ঘর গ্রাস করছে, হাতপা এলিয়ে তাই দেখতে হত।
আমাদের আমলে বছরে বছরে কত শত গ্রামে এই বুকফাটা ঘটনার আবৃত্তি চলত। শেষে ঘরপোড়া চাষাগুলো এ-গ্রাম সে-গ্রাম থেকে ভিক্ষে করে আবার বাড়ি করার কাঠখড় আনতে বেরত। এখন তাহলে তারো উপায় হয়েছে।
১১১