গ্রাম্য বৈঠক
তৃতীয় ব্যক্তি। দেবার অবিচার কেমন, তাও দেখো। এক গিন্নির দশ ছেলে সে দশ মাপ দুধ পাবে, আর যে বেচারীর একটি ছেলে সে এক মাপের বেশি পাবে না।
বুড়ো। আমাদের সরে পড়বার সময় হয়েছে। গলায় দড়ি দিয়ে সংসার থেকে বিদায় নিলে তবে বাঁচব। এখন হয়েছে ছোঁড়াদের রাজত্ব।
আমি বুঝলাম, বুডো বিপ্লবের ঝাঁকানি খেয়েছে, কিন্তু তার ভাবটা মাথায় থিতিয়ে বসাতে পারেনি। পুরোনো ছাড়লে সামনে দেখে অতল গহ্বর, তরাসেই হয় সারা। জিজ্ঞেস করলাম,—“সমবায়ভূক্ত করার জন্যে কি জবরদস্তি লাগিয়েছে।”
সকলে। না, না, তা নয়। আগে পেড়াপিড়ি চলত বটে, কিন্তু কর্তার মহা ভাঙনের উপদেশ বেরবার পর সে সব আর হয় না।
এক ব্যক্তি। হয় না বলছ কী করে। সমবায়ে যোগ না দিলে ঘ্যানর ঘ্যানরের চোটে কি সোয়াস্তি থাকে। অত্যেচারও আছে বই কি। সেদিন, মনে নেই, ঐ পোল (Pole) পাড়া থেকে ভরা-শীতে মেয়েছেলে-সুদ্ধ কতজনকে বাড়ি থেকে বার করে দিয়ে উত্তরে খাটতে পাঠিয়ে দিলে। বাপ রে, সে কী কান্নাকাটি।
যুবক। ওরা তো সব কুধনী।
বুড়ো। ভালো এক কুধনী কথা শিখেছ। ধনীদের কি রক্তমাংসের শরীর নয়,—ওদের ছেলেপিলে শীতে মারা পড়লে আমাদের গায়ে লাগে না?
যুবক। কালস্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়ালে দুঃখ তো ডেকে আনা হয়। ক’টি স্ত্রীলোক–বালকের খাতিরে বিপ্লব আটকে থাকতে পারে না। আগেকার আমলের বিকট অত্যেচারের কথা তোমরা ভুলেই যাচ্ছ।
১১৭