বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিশ্বমানবের লক্ষ্মীলাভ.djvu/১২১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

জমিদার-রাখালের কথা

আগেকার দিনে কাউকে রাখাল বললে গাল দেওয়া হত, আজকাল অবশ্য ওটা সম্মানের পদ। তবু সেই শৌখীন-প্রাণ ভদ্রলোক রাখালগিরি করছেন,—কেমন খাপছাড়া ঠেকল। ভাবলাম যাই, দেখে, আসি।

 বাড়ির হাতায় ঢুকেই তফাত বুঝতে দেরি হল না। একি সেই বাড়ি। কোথা সে চেকনাই, কোথায় সে ফুলের বাহার। বাগানের বেড়া ভাঙা, রাস্তায় আগাছা ঠেলে উঠেছে, সবশুদ্ধ পোড়ো চেহারা। এখন ঘরে ঘরে অনেক সমবায়ী পরিবারকে থাকতে দেওয়া হয়েছে, তাদের ছেলেপিলেরা চারদিকে ঘুরে বেড়াচ্ছে; গাছে গাছে দড়ি টাঙানো, তার উপর সকলের কাপড় শুখোচ্ছে।

 “ইব্রাহিম কোথায়?”—জিজ্ঞেস করায় একটি ছোটো মেয়ে বললে তিনি মাঠে গোরু চরাচ্ছেন।

 বিলের ধারে মাঠে গিয়ে দেখি, ঘাসের উপর ইব্রাহিমদাদা ব’সে, হাতে গোরু খেদাবার চাবুক। চেহারার সে চাকচিক্য আর নেই, অনেক দিন দাড়ি কামানো হয়নি, পাজামা গুটোনো, খালি পা, বেশ একটু বুড়িয়ে গেছেন। সামনে এক পাল গোরু আরামে ঘাস খাচ্ছে।

 প্রথমটা ইব্রাহিম আমায় চিনতে পারেননি, নাম বলতে খুশি হয়ে উঠলেন; তখন মুখে আগেকার জেল্লা কতক ফিরে এল। তাঁর পাশে ঘাসের উপর বসে তাঁকে আমার দেশে আসার কারণ জানিয়ে দিলে পর তিনি নিজের কথা বলতে আরম্ভ করলেন, “বুড়ো হয়ে গেছি, না? কিন্তু যত দেখাচ্ছে তত নয়। বুড়ো বয়সের উপযুক্ত হালকা কাজও পেয়েছি। এই দেখো আমার হাতিয়ার। সেনানায়কের যেমন তলোয়ার, আজ এরও তেমনি মহিমা।” ব’লে তাঁর হাতের চাবুকটা

১২১