বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিশ্বমানবের লক্ষ্মীলাভ.djvu/১৯২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
টিপ্পনী

ভবের খেলার পদে পদে যে ভাব বদলে চলতে হয়, তার ইশারা পাওয়া যায়। মন্ত্রটি এই;

তদ্ বিষ্ণোঃ পরমং পদং সদা পশ্যন্তি সূরয়ঃ
দিবীব চক্ষুঃ আততং।

 কথার পিঠে কথা নিয়ে সাদা বাংলায় এর মানে দাঁড়ায় এই রকম:

সূরীরা সেই বিষ্ণুর পরম পদ সদাই দেখেন,
চোখ দিয়ে আলোয় মেলা জিনিসের মতো।

 চোখের সামনে আলোয় ধরে দেওয়া জিনিসের মতো— উপমা তো বেশ পরিষ্কার। কিন্তু সেই বিষ্ণুর পরমপদ কাকে বলে।

 ঈশোপনিষদের প্রথম শ্লোকে বোঝা যায়, সেই বিষ্ণু হচ্ছেন যিনি ঈশা হয়ে লোকের মধ্যে যতলোক সব ছেয়ে আছেন। তিনি সৃষ্টির সব স্তরেই বিরাজ করেন, এক এক স্তরে বা লোকে তাঁর এক এক রকমের পদ দেখা যায়, আনন্দলোকে তাঁর চরম প্রকাশ। আনন্দ দেওয়া নেওয়াই তো প্রেম, সেই প্রেমের আবেগে নিচের লোক থেকে উপরের লোকে যেমন ওঠা যায়, তাঁর নিম্নপদ উচ্চপদ হয়ে দেখা দেয়, অবশেষে পুর্ণপ্রেমে তাঁর পরম পদের দর্শন লাভ হয়।

 ফুল কেজো লোকের হিসেবে ফলের সূচনা, শৌখিনের পক্ষে ঘরবাগানের সাজ, ভাবুকের চিত্তে তার মহিমা অপার। মুনীব যাকে বলে চাকর, বিজ্ঞানীর সংজ্ঞায় সে নর, প্রেমিকের সে আপনার। ছেলেতে মা দেখেন স্নেহের পুতুল, জনসেবক দেখেন দেশের আশা, সূরী দেখেন বিশ্বরূপ। যশোদা-মার প্রেমের আলো যেবার স্নেহের টান ছাড়িয়ে উঠেছিল, তিনিও তাই দেখেছিলেন।

 সূরীদের বলে জ্ঞানী; তার মানে প্রেমের আলোয় যা দেখা যায়, তাই সত্যি সত্যি জানা যায়। ধ্যানে জানতে হলেও সেই আলো চাই।

১৯২