দ্বিতীয় পালা
পঞ্চভূতের বশীকরণ
মাটির কথা
সূর্যের প্রতাপে পরাস্ত ম্রিয়মাণ মরু-বেচারা ধুলোয় গড়াগড়ি যায়, এ বর্ণনাটা ভুল। মরুটা রাক্ষস, লকলকে জিভ বাড়িয়ে ভালোজমি চেটে খেয়ে নিজের সামিল করতে চায়। বাতাসের সাহায্যে বালির আক্রমণের নমুনা এ দেশেও দেখা যায়। সমুদ্রতীরের বাড়িতে পাঁচিল ডিঙিয়ে এসে বাইরের বালি হাতার মধ্যে ঢিবি হয়ে ওঠে। বালির উপর দিয়ে রাস্তা পাকা ক’রে বাঁধলেও তার চিহ্ন বজায় রাখা দায়। কণারকের মস্ত বড়ো সূর্য-মন্দিরটাই বালি চাপা পড়েছিল। কাঠিয়াওয়াড় থেকে বালি উড়ে এসে রাজপুতানাকে মরুময় করে তুলেছে। বালি-চলা রুখতে না পারলে, বাতাস যেদিকে বয়, সেদিকে মরু এগোয়।
শুধু ভূমি নিয়ে মরু নয়, মরুর মধ্যে উপরের হাওয়াটাকেও ধরতে হয়—হাওয়াই বা বলছি কাকে, সে-যে অদৃশ্য আগুন। মরু-বালি যদি চলে বিশ পঞ্চাশ মাইল তো মরু-বাতাসের দৌড় হাজার মাইল। যখন ভরা গর্মিতে, সূর্যের-মারা অগ্নিবাণ ঠিক্রে, বালিটা ঝাঁ ঝাঁ করে, তখন উপরকার হাওয়া প্রচণ্ড ঘূর্ণিপাক খেয়ে যুদ্ধযাত্রায় বেরোয়—একা চললে ‘লু’ বালি-কণা উড়িয়ে নিলে ‘আঁধি’। মধ্য-এসিয়ার লূ লেগে রুশের অপর পারের উক্রেন প্রদেশে খেতের শস্য শুখোয়। দক্ষিণ থেকে আঁধি এলে রুশ চাষারা বলাবলি করে, “ইরানীরা কাপড় ঝাড়ছে।” এই আঁধি রুশের ফলবাগান ছুঁয়ে গেলে গাছের পাতা কুঁক্ড়ে ডগা লটকে যায়।
২৫