বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিশ্বমানবের লক্ষ্মীলাভ.djvu/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।
পঞ্চভূতের বশীকরণ

জলের ভিতর গোলা নুনের মতো, হাওয়ায় বেমালুম মিশে থাকে। জল হাওয়ার চেয়ে ভারি হলেও জলের ভাপ তার চেয়ে হালকা, তাই জোলো হাওয়া পাতলা হয়ে উপরে উঠে ডাঙার দিকে বইতে থাকে। পাহাড়ে ঠেকে জল ঝরাবার পর হাওয়া শুখিয়েও যায় ঠাণ্ডাও হয়, তাইতে ভারি হয়ে নিচে নেমে সমুদ্রের দিকে ফেরে। আসলে, কিন্তু যাতায়াতের পথ দুটো এত সোজাসুজি নয়,—পৃথিবীর পাক খাওয়া আছে, মেরুর বাঁধা ঠাণ্ডাই আছে, মরুর আগুনের ঝল্কা আছে, সমুদ্রের সামঞ্জস্য—গুণ আছে—এত রকম ক্রিয়ার ফলে হাওয়ার পথ জটিল হয়ে পড়ে।

 যেমন করেই চলুক, দুই বিপরীত বাতাসের ঠেকাঠেকি হলে ঠাণ্ডা ভারি হাওয়ার ঠেলায় জোলো হাওয়া আরো উপরে উঠে যায়। পাহাড়ে যারা চড়ে তারা জানে ক্রমে উঠতে থাকলে ধাপে ধাপে কেমন ঠাণ্ডা বাড়ে। তাই ভাপ উঁচুতে উঠলে ঠাণ্ডায় জ’মে আবার জল হতে চায়। কিন্তু চাইলেই তো হয় না, জলের বসবার জায়গা দরকার করে,—যেমন নিচের হাওয়ার জল শীত পড়লে শিশিরবিন্দু হয়ে ঘাসে পাতায় বসে। আকাশে সে রকম জায়গা পাওয়া যায় ধুলো-ধোঁওয়ার কণার উপর, যারা বৈদ্যুৎ সংগ্রহ করায় উপরে চড়ে যেতে পেরেছে। ঠাণ্ডা ভাপ ধুলোর আসনে বসতে পেলে জলের কণা হয়ে দেখা দেয়,—মাটির কাছাকাছি থাকলে তাদিকে বলে কুয়াশা, উপর আকাশে থাকলে মেঘ! কতকগুলি মেঘের কণা মিশে জলের ফোঁটা বাঁধলে আকাশে আর ভেসে থাকতে পারে না, হাওয়ার চেয়ে ভারি হওয়ায় ধরায় ঝরে পড়ে। কিন্তু মেঘের কণার সঙ্গে থাকে, দামী হোক দামিনী হোক, একটি করে বৈদ্যুৎকণা— তারা না মিললে জলের কণারাও মিশতে পায় না। সে অবস্থায় মেঘ মেঘই থাকে, জল হয়ে বর্ষায় না, বাতাসের সঙ্গে সঙ্গে রঙের বাহার দিয়ে ঘুরে বেড়ায়,—তাতেই কবির মন সরস হয় বটে,

৪৬