বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বিশ্বমানবের লক্ষ্মীলাভ.djvu/৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা হয়েছে, কিন্তু বৈধকরণ করা হয়নি।

ভণিতা

 ভূগোল নামে আমাদের ছেলেবেলায় যা পড়তে হত, তার বেশির ভাগই ফর্দের মতো ছিল— রাজ্যের ফর্দ, শহরের, সমুদ্রের, নদীর, পাহাড়ের, মরু-ভূমির ফর্দ। আর ছিল অঙ্কের ঘটা,— দেশের প্রসার, শহরের ভিড়, নদীর লম্বাই, পাহাড়ের খাড়াই,— রকম-বেরকমের অঙ্ক, সাংখ্য প্রদর্শনী বললেও হয়। এ সব তথ্য এমন ভাবে ধরে দেওয়া হত, যেন চিরকাল ঐ ছিল, আজও আছে, বরাবরই থাকবে। এক কথায়, জগতের জঙ্গমত্ব লোপাট করে দিয়ে পৃথিবীর চেহারা একটা স্থাবর পিণ্ডের মতো দেখানো হত!

 কিন্তু আমাদের আমলটুকুর মধ্যে কী হের-ফের না দেখা গেল। কত রাজ্যের রাজা কালের কবলে পড়ল, রক্তস্রোতের তোড়ে কত সীমানার অদলবদল হল। কোথাও বা কাটা খালের জলে মরু উদ্ধার পেল, কোথাও নদী শুখিয়ে লোকালয় উজাড় হতে চলল। সমুদ্রে সমুদ্রে যোগ করা হল, মানুষে মানুষে বিচ্ছেদ বাড়তে থাকল; যানবাহনের গতি বেড়ে গেল তো কাছাকাছির ঘেঁষার মতি রইল না। দেখে শুনে সেয়ানা হবার পর সেকেলে ভুগোলের পাতা ওলটালে কোন্‌ অতীতের পুঁথির মতো লাগে।

 কাজেই আজকালকার শিক্ষা ব্যাপার হয়েছে রকমারি। কোন্‌ দেশে কত শহর আছে জানিয়ে দিলেই কথা ফুরোয় না; সে সে জায়গায় লোকে জটলা করল কেন, নগরপল্লীর মরণবাচনের ধারা কেমন, তাতে দৈবের হাত কতখানি, মানুষ নিজেই বা কী করতে পারে— নানান আলোচনা এসে পড়ে। তেমনি এখানে-ওখানে পাহাড়গুলো পাশাপাশি মাথা তুলে দাড়িয়ে আছে দেখিয়ে দিলেই কৌতূহল মেটে