ঈশাসংকট
প্রথম দিকে জীব দেহ-ধারণের চেষ্টার এক দৃষ্টান্ত স্পঞ্জ জাতি, যে স্পঞ্জের সমাজদেহের খোলসকে ইংরেজরা গামছার মতো ব্যবহার করে। এই ফোঁপরা-ছিবড়ের মতো জিনিসটা সমুদ্রতলার একজাতের প্রাণীকণা সমবায়ের তৈরি বাস-পল্লী। সুড়ঙ্গের মতো যে সব গর্ত ওর মধ্যে দেখা যায়, তারি ধারে ধারে মাথা গুঁজে ন্যাজের দিক ফাঁকায় রেখে, প্রাণীকণারা স্থাবর হয়ে থাকে,—ভিটে কামড়ে যেমন পাড়াগেঁয়ে মানুষ থাকতে চায়, তার চেয়েও কায়েম হয়ে। এ অবস্থায় তারা আলাদা হয়ে খাবার খোঁজে বেড়াতে পারে না, কিন্তু সবাই মিলে একতালে ন্যাজ নেড়ে তারা এই সুড়ঙ্গের ভিতর দিয়ে জলের স্রোত চালাতে থাকে। জীবদেহে রসরক্ত চলাচলের আভাস এখানে পাওয়া যায়। স্রোতের সঙ্গে যা-কিছু পুষ্টিকর জিনিস ভেসে আসে, যে-যার জায়গায় আটকে থাকলেও তার ভাগ সকলে পায়।
এই যে মিলেমিশে সমুদ্রের মধ্যেকার মালমসলা জুটিয়ে সুরঙ্গময় বাসস্থান তৈরি করা, একসঙ্গে তালে তালে ন্যাজ নাড়া, প্রত্যেকের আলাদা প্রাণশক্তি সকলকে ঠিক একভাবে এসব কেমন করে শেখাতে পারে। তাই আবার প্রাণীদলের উপরকার জৈবিক শক্তির প্রভাব মানতে হয়।
স্পঞ্জের মতো ঢিলে-ঢালা সমবায় দিয়ে আরম্ভ করে, প্রাণীকণারা এক একদল বর্ণভেদ কর্মভেদ স্বীকার করে নানা অঙ্গবিশিষ্ট আঁটসাঁট জীবদেহ গড়তে শিখে উঠল। সেই সঙ্গে দলাদলির সূত্রপাত হল, খাদ্যখাদক সম্বন্ধ উৎকট হয়ে উঠল।
ঢেউয়ের আধার সমুদ্রকে আমরা ‘এক’ বলি, কিন্তু ঢেউগুলি একটি আর একটিকে কখনো বাড়ায়, কখনো চাপা দেয়, ঠোকাঠুকি লাগলে দুটোই ভেঙে পড়ে, তাই দেখে তাদিকে ‘আলাদা’ বলি। আবার
৯৩