ঈশাসংকট
কিন্তু সে পরিণামের উদ্দেশ্যে যে-সংঘশক্তি মরবার তরে ঝাঁকে ঝাঁকে উইপিপীলিকাদিকে পক্ষ জোগায়, তাকে অন্তত মিতাচারী বলা যায় না।
ঈশার এক খণ্ড পথ হারিয়ে অন্ধকারে ঘুরপাক খাচ্ছে, ঢিবি জীবনের চেহারাটা সেইরকম নয় কি।
মৌমাছিদের সংঘশক্তি রাজসিক, চাকের মধুময় আঁধার থেকে প্রফুল্ল কাননের জেল্লায় এদের আনাগোনা। চাকের বাসিন্দাবা হচ্ছে—একটি পাটরানী, গুটিকতক বাচ্ছা রানী, দশবিশটা পুরুষ-মোসাহেব, আর বাকি সব লিঙ্গহীন কর্মী। আকাশমার্গে বিবাহ-উৎসবের মাতামাতির পর থিতিয়ে বসলে, পাটরানীর কাজ হচ্ছে চাকের ঘরে ঘরে ডিম পেড়ে বেড়ানো। চাকের বাসিন্দা বেড়ে উঠলে, বাচ্ছা রানীরাও সেই সঙ্গে সাবালিকা হয়ে এক এক ঝাঁক কর্মী নিয়ে স্থানান্তরে নতুন চাক ফাঁদতে বেরিয়ে পড়ে, এই ভার তাদের উপর। আর কর্মীরা একনিষ্ঠায় চাকের যত কিছু কাজ সব করতে থাকে—মোম তৈরি থেকে আরম্ভ করে, মোম দিয়ে চাক গড়া, রানীদের সেবা, ডিম-ফোটা বাচ্ছাদের খাওয়ানো, রোদের বেলায় মধু এনে ভাঁড়ারে রাখা, শত্রুর আক্রমণ ঠেকানো, রাতে সকলে মিলে একসঙ্গে ডানা নেড়ে চাকের হাওয়া বদলানো, বাচ্ছাদের মধ্যে কারা রানী হবে, কারা পুরুষ হবে, কারা কর্মী থাকবে, রেণুতে মধুতে মিশিয়ে সে রকম খাবার ব্যবস্থা করা,—এমন অশেষ কাজে খাটতে খাটতে এদের অল্প আয়ুর কটা দিনের মধ্যে শরীর জীর্ণ হয়ে যায়।
কর্মীদের এত খাটুনির উৎসাহ কি মধুর রসে মাতোয়ারা হওয়ার লোভে?—তা তো নয়।—যেটুকু মধু খায় এক তো তার চেয়ে ঢের বেশি তুলে রাখে, তাছাড়া রানীকে বাচ্ছাকে না খাইয়ে ওরা তো খায়ই
৯৭