পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১০৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

$w বিষবৃক্ষ গুণজনিত প্রণয় চিরস্থায়ী বটে—কিন্তু গুণ চিনিতে দিন লাগে। এই জন্য সে প্রণয় একেবারে হঠাৎ বলবান হয় না—ক্রেমে সঞ্চারিত হয় । কিন্তু রূপজ মোহ এককালীন সম্পূর্ণ বলবান হইবে। তাহার প্রথম বল এমন তুৰ্দ্দমনীয় হয় যে, অন্ত সকল বৃত্তি তদ্বারা উচ্ছিন্ন হয়। এই মোহ কি—এই স্থায়ী প্রণয় কি না—ইহা জানিবার শক্তি থাকে না। অনন্তকালস্থায়ী প্রণয় বলিয় তাহাকে বিবেচনা হয়। তোমার তাঁহাই বিবেচনা হইছিল —এই মোহের প্রথম বলে সূৰ্য্যমুখীর প্রতি তোমার যে স্থায়ী প্রেম, তাহ তোম চক্ষে অদৃপ্ত হইয়াছিল। এই তোমার ভ্রান্তি। এ ভ্রান্তি মম্বন্ধের স্বত্তাধসিদ্ধ। গুস্তএব তোমাকে তিরস্কার করিব না। বরং পরামর্শ দিই, ইহাতেই সুখী হইবার চেষ্টা করা : তুমি নিরাশ হইও না। সূৰ্য্যমুখী অবশ্য পুনরাগমন করিবেন—তোমাকে না দেখিয় তিনি কত কাল থাকিবেন ? যত দিন না আসেন, তুমি কুন্দনন্দিনীকে স্নেহ করিও । তোমার পত্রাদিতে যতদূর বুঝিয়াছি, তাহাতে বোধ হইয়াছে তিনিও গুণহীন নহেন। রূপজ মোহ দূর হইলে, কালে স্থায়ী প্রেমের সঞ্চার হইবে। তাহা হইলে তাহাকে লইয়াই মুখী হইতে পারিবে। এবং যদি তোমার জ্যেষ্ঠ৷ ভাৰ্য্যার সাক্ষাৎ আর না পাও, তবে তাহাকে ভুলিতেও পারিবে। বিশেষ কনিষ্ঠা তোমাকে ভালবাসেন। ভালবাসায় কখন অযত্ন করিবে না ; কেন না, ভালবাসাতেই মানুষের একমাত্ৰ নিৰ্ম্মল এবং অবিনশ্বর সুখ । ভালবাসাই মনুষ্যজাতির উন্নতির শেষ উপায়—মনুষ্যমাত্রে পরস্পরে ভালবাসিলে আর মনুষ্যকৃত অনিষ্ট পৃথিবীতে থাকিবে না। ( নগেন্দ্রনাথের প্রত্যুত্তর ) তোমার পত্র পাইয়া, মানসিক ক্লেশের কারণ, এ পর্য্যন্ত উত্তর দিই নাই। তুমি যাহা লিথিয়াছ, তাহা সকলই বুঝিয়াছি এবং তোমার পরামর্শই যে সৎপরামর্শ তাহাও জানি। কিন্তু গৃহে মনঃস্থির করিতে পারি না। এক মাস হইল, আমার সূৰ্য্যমুখী আমাকে ত্যাগ করিয়া গিয়াছেন, আর র্তাহার কোন সংবাদ পাইলাম না। তিনি যে পথে গিয়াছেন, আমিও সেই পথে যাইবার সঙ্কল্প করিয়াছি। আমিও গৃহত্যাগ করিব। দেশে দেশে তাহার সন্ধান করিয়া বেড়াইব । তাহাকে পাই, লইয়া গৃহে আসিব ; নচেৎ আর আসিব না। কুন্দনন্দিনীকে লইয়া আর গৃহে থাকিতে পারি না। সে চক্ষুশুল হইয়াছে। তাহার দোষ নাই—দোষ আমারই—কিন্তু আমি তাহার মুখদর্শন আর সহ করিতে পারি না। আগে কিছু বলিতাম না—এখন নিত্য ভৎসনা করি—সে র্কাদে,—আমি কি করিব ? আমি