পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

উনচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ : সব ফুরাইল, যন্ত্রণা ফুরায় না ১২১ ঐশ। ব্রাহ্মণের সঙ্গে তাহার পরিবারস্থার স্বায় সূৰ্য্যমুখী বৰ্হি পৰ্য্যন্ত গিয়াছিলেন। কলিকাতা পৰ্য্যন্ত নৌকায়, কলিকাতা হইতে রাণীগঞ্জ পর্য্যন্ত রেলে, রাণীগঞ্জ হইতে বুলকট্রেণে গিয়াছিলেন ; এ পর্য্যন্ত স্থাটিয়া ক্লেশ পান নাই। নগেন্দ্র । তার পর কি ব্রাহ্মণ র্তাহাকে বিদায় দিল ? ঐশ । না; সূৰ্য্যমুখী আপনি বিদায় লইলেন। তিনি আর কাশী গেলেন না। কত দিন তোমাকে না দেখিয়া থাকিবেন ? তোমাকে দেখিবার মানসে বর্হি হইতে পদব্রজে ফিরিলেন । কথা বলিতে শ্ৰীশচন্দ্রের চক্ষে জল আসিল । তিনি নগেন্দ্রের মুখপানে চাহিয়৷ দেখিলেন। শ্ৰীশচন্দ্রের চক্ষের জলে নগেন্দ্রের বিশেষ উপকার হইল। তিনি শ্রীশচন্দ্রের কণ্ঠলগ্ন হইয়া তাহার কাধে মাথা রাখিয়া রোদন করিলেন। শ্ৰীশচন্দ্রের বাট আসিয়া এ পর্য্যন্ত নগেন্দ্র রোদন করেন নাই—তাহার শোক রোদনের অতীত। এখন রুদ্ধশোকপ্রবাহ বেগে বহিল। নগেন্দ্র শ্ৰীশচন্দ্রের স্বন্ধে মুখ রাখিয়া বালকের মত বহুক্ষণ রোদন করিলেন। উহাতে যন্ত্রণার অনেক উপশম হইল। যে শোকে রোদন নাই, সে যমের দূত। . নগেন্দ্র কিছু শাস্ত হইলে শ্ৰীশচন্দ্র বলিলেন, “এ সব কথায় আজ আর আবশ্বক নাই ।” নগেন্দ্র বলিলেন, “আর বলিবেই বা কি ? অবশিষ্ট যাহা যাহা ঘটিয়াছিল, তাহ ত চক্ষে দেখিতে পাইতেছি। বর্হি হইতে তিনি একাকিনী পদব্রজে মধুপুরে আসিয়াছিলেন। পথহঁাটার পরিশ্রমে, অনাহারে, রৌদ্র বৃষ্টিতে, নিরাশ্রয়ে আর মনের ক্লেশে সূৰ্য্যমুখী রোগগ্ৰস্ত হইয়া মরিবার জন্য পথে পড়িয়াছিলেন ?” শ্ৰীশচন্দ্র নীরব হইয়া রহিলেন। পরে কহিলেন, “ভাই, বৃথা কেন আর সে কথা ভাব ? তোমার দোষ কিছুই নাই। তুমি তার অমতে বা অবাধ্য হইয়া কিছুই কর নাই। যাহা আত্মদোষে ঘটে নাই, তার জন্য অনুতাপ বুদ্ধিমানে করে না।” নগেন্দ্রনাথ বুঝিলেন না। তিনি জানিতেন তারই সকল দোষ ; তিনি কেন বিষবৃক্ষের বীজ হৃদয় হইতে উচ্ছিন্ন করেন নাই ? ఆ