পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ : ছায়া HO(t অদ্ভুত ব্যাপার তাহার দৃষ্টিপথে আসিল । ঝঞ্জাবাতের শব্দে চমকিত হইয়া, খাটের পাশে যে দ্বার মুক্ত ছিল, সেই দিকে তাহার দৃষ্টি পড়িল। সেই মুক্তদ্বারপথে, ক্ষীণাtলাকে এক ছায়াতুল্য মূৰ্ত্তি দেখিলেন। ছায়া স্ত্রীরূপিণী, কিন্তু আরও যাহা দেখিলেন, তাহাতে নগেন্ত্রের শরীর কণ্টকিত এবং হস্তপদাদি কম্পিত হইল। স্ত্রীরূপিণী মূৰ্ত্তি সূৰ্য্যমুখীর অবয়ববিশিষ্ট। নগেন্দ্র যেমন চিনিলেন যে, এ সূৰ্য্যমুখীর ছায়া—অমনি পৰ্য্যন্ধ হইতে ভূতলে পড়িয়া ছায়াপ্রতি ধাবমান হইতে গেলেন। ছায়া অদৃশু হইল। সেই সময়ে আলো নিবিল। । তখন নগেন্দ্র চীৎকার করিয়া ভূতলে পড়িয়া মূৰ্ছিত হইলেন। পঞ্চচত্বারিংশত্তম পরিচ্ছেদ ছায়া যখন নগেন্দ্রের চৈতন্যপ্রাপ্তি হইল, তখনও শয্যাগৃহে নিবিড়ান্ধকার। ক্রমে ক্রমে র্তাহার সংজ্ঞা পুনঃসঞ্চিত হইতে লাগিল। যখন মূৰ্ছার কথা সকল স্মরণ হইল, তখন বিস্ময়ের উপর আরও বিস্ময় জন্মিল। তিনি ভূতলে মূৰ্ছিত হইয়া পড়িয়াছিলেন, তবে র্তাহার শিরোদেশে উপাধান কোথা হইতে আসিল ? আবার এক সন্দেহ–এ কি বালিশ ? বালিশ স্পর্শ করিয়া দেখিলেন—এ ত বালিশ নহে। কোন মনুষ্যের উরুদেশ । কোমলতায় বোধ হইল, স্ত্রীলোকের উরুদেশ ! কে আসিয়া মূৰ্ছিত অবস্থায় তাহার মাথা তুলিয়া উরুতে রাখিয়াছে ? এ কি কুন্দনন্দিনী ? সন্দেহ ভঞ্জনার্থে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কে তুমি?” তখন শিরোরক্ষাকারিণী কোন উত্তর দিল না—কেবল দুই তিন বিন্দু উষ্ণ বারি নগেন্দ্রের কপোলদেশে পড়িল। নগেন্দ্ৰ বুঝিলেন, যেই হউক, সে র্কাদিতেছে। উত্তর না পাইয়৷ নগেন্দ্র তাহার অঙ্গস্পর্শ করিলেন। তখন অকস্মাৎ নগেন্দ্র বুদ্ধিভ্রষ্ট হইলেন, তাহার শরীর রোমাঞ্চিত হইল। তিনি নিশ্চেষ্ট জড়ের মত ক্ষণকাল পড়িয়া রহিলেন। পরে ধীরে ধীরে রুদ্ধনিশ্বাসে রমণীর উরুদেশ হইতে মাথা তুলিয়া বসিলেন। এখন ঝড় বৃষ্টি থামিয়া গিয়াছিল। আকাশে আর মেঘ ছিল না—পূর্ব দিকে প্রভাতোদয় হইতেছিল। বাহিরে বিলক্ষণ আলোক প্রকাশ পাইয়াছিল—গৃহমধ্যেও আলোকরঞ্জ দিয়া অল্প অল্প আলোক আসিতেছিল। নগেন্দ্র উঠিয়া বসিয়া দেখিলেন যে, রমণী গাত্রোথান করিল—ধীরে ধীরে দ্বারোদেশে চলিল। নগেন্দ্র তখন অনুভব করিলেন,