পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

পঞ্চম পরিচ্ছেদ ; অনেক প্রকারের কথা లి 4:4 彝 কেশরচনা করিয়া দিলেন, এবং কতকগুলি অলঙ্কার পূরাইয়া দিয়া বলিলেন, “যা, এখন, দাদাবাবুকে প্রণাম করিয়া আয়। আর দেখিস্–যেন এ বাড়ীর বাবুকে প্রণাম ফেলিস ন—এ বাড়ীর বাবু দেখিলেই বিয়ে করে ফেলিবে।” 把别 নগেন্দ্রনাথ, কুন্দের সকল কথা সূৰ্য্যমুখীকে লিখিলেন। হরদেব ঘোষাল নামে তাহার এক প্রিয় সুহৃৎ দূরদেশে বাস করিতেন—নগেন্দ্র তাহাকেও পত্র লেখার কালে -- কুন্দনন্দিনীর কথা বলিলেন, যথা— “বল দেখি, কোন বয়সে স্ত্রীলোক সুন্দরী ? তুমি বলিবে, চল্লিশ পরে, কেন না, তোমার ব্রাহ্মণীর আরও দুই এক বৎসর হইয়াছে। কুন্দ নামে যে কন্যার পরিচয় দিলাম— তাহার বয়স তের বৎসর। তাহাকে দেখিয়া বোধ হয় যে, এই সৌন্দর্য্যের সময়। প্রথম যৌবনসঞ্চারের অব্যবহিত পূর্বেই যেরূপ মাধুৰ্য্য এবং সরলতা থাকে, পরে তত থাকে না । এই কুন্দের সরলতা চমৎকার ; সে কিছুই বুঝে না । আজিও রাস্তার বালকদিগের সহিত খেলা করিতে ছুটে ; আবার বারণ করিলেই ভীত হইয়া প্রতিনিবৃত্ত হয়। কমল তাহাকে লেখাপড়া শিখাইতেছে। কমল বলে, লেখাপড়ায় তাহার দিব্য বুদ্ধি। কিন্তু অন্ত কোন , কথাই বুঝে না। বলিলে বৃহৎ নীল দুইটি চক্ষু—চক্ষু দুইটি শরতের মত সৰ্ব্বদাই স্বচ্ছ জলে ভাসিতেছে—সেই দুইটি চক্ষু আমার মুখের উপর স্থাপিত করিয়া চাহিয়া থাকে ; কিছু বলে না—আমি সে চক্ষু দেখিতে দেখিতে অন্যমনস্ক হই, আর বুঝাইতে পারি না। তুমি আমার মতিস্থৈৰ্য্যের এই পরিচয় শুনিয়া হাসিবে, বিশেষ তুমি বাতিকের গুণে গাছ কয় চুল পাকাইয়া ব্যঙ্গ করিবার পরওয়ান হাসিল করিয়াছ ; কিন্তু যদি তোমাকে সেই দুইটি চক্ষুর সম্মুখে দাড় করাইতে পারি, তবে তোমারও মতিস্থৈৰ্য্যের পরিচয় পাই। চক্ষু দুইটি যে কিরূপ, তাহা আমি এ পর্য্যস্ত স্থির করিতে পারিলাম না। তাহা দুইবার এক • রকম দেখিলাম না ; আমার বোধ হয়, যেন এ পৃথিবীর সে চোখ নয়; এ পৃথিবীর সামগ্ৰী যেন ভাল করিয়া দেখে না ; অন্তরীক্ষে যেন কি দেখিয়া তাহাতে নিযুক্ত আছে। কুনা যে নির্দোষ সুন্দরী, তাহা নহে। অনেকের সঙ্গে তুলনায় তাহার মুখাবয়ব অপেক্ষাকৃত অপ্রশংসনীয় বোধ হয়, অথচ আমার বোধ হয়, এমন সুন্দরী কখনও দেখি নাই। বোধ হয় যেন কুন্দনন্দিনীতে পৃথিৱী ছাড়া কিছু আছে, রক্ত 'মাংসের যেন গঠন নয় ; যেন চন্দ্রকর কি পুষ্পসৌরভকে শরীর করিয়া তাহাকে গড়িয়াছে। তাহার সঙ্গে তুলনা করিবার সামগ্রী হঠাৎ মনে হয় না। অতুল্য পদার্থটি, তাহার সর্বাঙ্গণ শান্তভাবব্যক্তি—যদি, স্বচ্ছসরোবর শরচ্চত্রের কিরণসম্পাতে যে ভাবৰ্যক্তি, তাহ বিশেষ