পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/২৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবৃক্ষ سان দেড়তালা বৈঠকখানা। অতি প্রশস্ত সোপানারোহণ করিয়া তাহাতে উঠিতে হয়। তাহার বারেণ্ডায় বড় বড় মোট ফ্লটেড থাম ; হৰ্ম্ম্যতল মৰ্ম্মরপ্রস্তরাবৃত। আলিশার উপরে, মধ্যস্থলে এক মৃন্ময় বিশাল সিংহ জটা লম্বিত করিয়া, লোল জিহ্বা বাহির করিয়াছে। এইটি নগেন্দ্রের বৈঠকখান । তৃণপুষ্পময় ভূমিখণ্ডদ্বয়ের দুই পার্শ্বে, অর্থাৎ বামে ও দক্ষিণে দুই সারি একতাল। কোঠা। এক সারিতে দপ্তরখানা ও কাছারি। আর এক সারিতে তোষাখানা এবং ভূত্যবর্গের বাসস্থান। ফটকের দুই পার্শ্বে দ্বাররক্ষকদিগের থাকিবার ঘর। এই প্রথম মহলের নাম “কাছারি বাড়ী”। উহার পার্শ্বে ‘পূজার বাড়ী”। পূজার বাড়ীতে রীতিমত বড় পূজার দালান ; আর তিন পার্শ্বে প্রথামত দোতালা চক বা চত্বর। মধ্যে বড় উঠান। এ মহলে কেহ বাস করে না । দুর্গোৎসবের সময়ে বড় ধুমধাম হয়, কিন্তু এখন উঠানে টালির পাশ দিয়া ঘাস গজাইতেছে। দালান, দরদালান, পায়রায় পুরিয়া পড়িয়াছে, কুঠারি সকল আসবাবে ভরা,—চাবি বন্ধ। তাহার পাশে ঠাকুরবাড়ী। সেখানে বিচিত্র দেবমন্দির, মুন্দর প্রস্তরবিশিষ্ট “নাট-মন্দির”, তিন পাশে দেবতাদিগের পাকশাল, পূজারীদিগের থাকিবার ঘর এবং অতিথিশালা। সে মহলে লোকের অভাব নাই। গলায় মালা চন্দনতিলকবিশিষ্ট পূজারীর দল, পাচকের দল ; কেহ ফুলের সাজি লইয়া আসিতেছে, কেহ ঠাকুর স্নান কুরাইতেছে, কেহ ঘণ্টা নাড়িতেছে, কেহ বকাবকি করিতেছে, কেহ চন্দন ঘসিতেছে, কেহ পাক করিতেছে। দাসদাসীরা কেহ জলের ভার আনিতেছে, কেহ ঘর ধুইতেছে, কেহ চাল ধুইয়া আনিতেছে, কেহ ব্ৰাহ্মণদিগের সঙ্গে কলহ করিতেছে। অতিথিশালায় কোথাও ভস্মমাখা সন্ন্যাসী ঠাকুর জটা এলাইয়া, চিত হইয়া শুইয়া আছেন। কোথাও উদ্ধবাহু এক হাত উচ্চ করিয়া, দত্তবাড়ীর দাসমহলে ঔষধ বিতরণ করিতেছেন। কোথাও শ্বেতশুশ্রুবিশিষ্ট গৈরিকবসনধারী ব্রহ্মচারী রুদ্রাক্ষমালা দোলাইয়া, নাগরী অক্ষরে হাতে লেখা ভগবদগীতা পাঠ করিতেছেন। কোথাও, কোন উদরপরায়ণ “সাধু” ঘি ময়দার পরিমাণ লইয়া, গণ্ডগোল বাধাইতেছে। কোথাও বৈরাগীর দল শুষ্ক কণ্ঠে তুলসীর মালা আঁটিয়া, কপাল জুড়িয়া, তিলক করিয়৷ মৃদঙ্গ বাজাইতেছে, মাথায় আর্কফল৷ নড়িতেছে, এবং নাসিক দোলাইয়। “কথা কইতে যে পেলেম না—দাদা বলাই সঙ্গে ছিল—কথা কইত্ত্বে যে” বলিয়া কীৰ্ত্তন করিতেছে। কোথাও, বৈষ্ণবীর। বৈরাগিরঞ্জন রসকলি কাটিয়া, খঞ্জনীর তালে “মধো কানের” কি “গোবিন্দ অধিকারীর” গীত গায়িতেছে। কোথাও কিশোরবয়স্ক নবীনা বৈষ্ণবী প্রাচীনার সঙ্গে গায়িতেছে, কোথাও অৰ্দ্ধবয়সী বুড়া বৈরাগীর সঙ্গে গল মিলাইতেছে। নাটমন্দিরের