পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম পরিচ্ছেদ ঃ হরিদাসী বৈষ্ণবী १é বৈষ্ণবী গান কৱিৰে শুনিয়া, সে তাহার আর একটু সন্নিকটে আসিল । তাহার ছাত্র সেই অবকাশে উঠিয়া গিয়া সন্দেশভোজী ৰালকের হাত হইতে সন্দেশ কাড়িয়া লইয়। আপনি ভক্ষণ করিল। - বৈষ্ণবী জিজ্ঞাসা করিল, “কি গায়িব ?” তখন শ্রোত্রীগণ নানাবিধ ফরমায়েস r: করিলেন ; কেহ চাহিলেন “গোবিন্দ অধিকারী”—কেহ “গোপালে উড়ে।” যিনি Mদাশরথির পাচালী পড়িতেছিলেন, তিনি তাহাই কামনা করিলেন। দুই একজন প্রাচীন কৃষ্ণবিষয় হুকুম করিলেন। তাহারই টীকা করিতে গিয়া মধ্যবয়সীরা “সখীসংবাদ” এবং “বিরহ" বলিয়া মতভেদ প্রচার করিলেন। কেহ চাহিলেন, “গোষ্ঠ”—কোন লজ্জাহীন যুবতী বলিল, “নিধুর টপ্পা গাইতে হয় ত গাও—নহিলে শুনিব না।” একটি অফুটবাচ বালিক। বৈষ্ণবীকে শিক্ষা দিবার অভিপ্রায়ে গাইয়া দিল, “তোলা দাসনে দাসনে দাসনে ঘূতি।” বৈষ্ণবী সকলের হুকুম শুনিয়া কুন্দের প্রতি বিছন্দামতুল্য এক কটাক্ষ করিয়া কহিল, “হঁ্যা গা—তুমি কিছু ফরমাস করিলে না ?” কুন্দ তখন লজ্জাবনতমুখী হইয়া অল্প একটু হাসিল, কিছু উত্তর করিল না। কিন্তু তখনই একজন বয়স্তার কাণে কাণে কহিল, “কীৰ্ত্তন গাইতে বল না ?” • বয়স্তা তখন কহিল, “ওগো কুন্দ কীৰ্ত্তন করিতে বলিতেছে গে৷ ” তাহ শুনিয়া বৈষ্ণবী কীৰ্ত্তন করিতে আরম্ভ করিল। সকলের কথা টালিয়। বৈষ্ণবী তাহার কথা রাখিল দেখিয়া কুন্দ বড় লজ্জিত হইল। হরিদাসী বৈষ্ণবী প্রথমে খঞ্জনীতে দুই একবার মৃদু মৃদ্ধ যেন ক্রীড়াচ্ছলে অঙ্গুলি প্রহার করিল। পরে আপন কণ্ঠমধ্যে অতি মৃদ্ধ স্বত্ব নববসন্তপ্রেরিত এক ভ্রমরীর গুঞ্জনবৎ স্বরের আলাপ করিতে লাগিল—যেন লজ্জাশীল৷ বালিকা স্বামীর নিকট প্রথম . প্রেমব্যক্তি জন্য মুখ ফুটাইতেছে। পরে অকস্মাৎ সেই ক্ষুদ্রপ্রাণ খঞ্জনী হইতে বাষ্ঠবিষ্ঠাবিশারদের অঙ্গুলিজনিত শব্দের স্থায় মেঘগম্ভীর শব্দ বাহির হইল, এবং তৎসঙ্গে শ্রোত্রীদিগের শরীর কণ্টকিত করিয়া, অঙ্গরোনিন্দিত কণ্ঠগীতিধ্বনি সমুখিত হইল। তখন রমণীমণ্ডল বিস্মিত, বিমোহিতচিত্তে শুনিল যে, সেই বৈষ্ণবীর অতুলিত কণ্ঠ, অট্টালিকা পরিপূর্ণ করিয়া আকাশমার্গে উঠিল। মূঢ় পৌরস্ত্রীগণ সেই গানের পারিপাট্য কি বুঝিবে ? বোদ্ধা থাকিলে বুঝিত যে, এই সৰ্ব্বাঙ্গীণতাললয়স্বরপরিশুদ্ধ গান, কেবল স্বকণ্ঠের কার্ষ্য লছে। বৈষ্ণবী যেই হউক, সে সঙ্গীতবিদ্যায় অসাধারণ সুশিক্ষিত এবং অল্পবয়সে তাহার পারদর্শী। do