পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৩৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

নবম পরিচ্ছেদ ঃ হরিদাসী বৈষ্ণবী ३१ সেইখানে গেল। যেখানে অন্য স্ত্রীলোকের বসিয়া রহিল, সেখান হইতে ঐ স্থান এরূপ ব্যবধান যে, তথায় মৃত্ব মৃদ্ধ কথা কহিলে কেহ শুনিতে পায় না। সেই স্থানে গিয়া কুন্দ বৈষ্ণবীর হাতে জল ঢালিয়া দিতে লাগিল, বৈষ্ণবী হাত মুখ ধুইতে লাগিল । ধুইতে ধুইতে অন্যের অশ্রুতস্বরে বৈষ্ণবী মৃদ্ধ মৃদ্ধ বলিতে লাগিল, “তুমি নাকি গ कून्न ?” -- কুন্দ বিস্মিত হইয়া জিজ্ঞাসা করিল, “কেন গা ?” বৈ । তোমার শ্বাশুড়ীকে কখন দেখিয়াছ ? কু। না । কুন্দ শুনিয়াছিল যে, তাহার শ্বাশুড়ী ভ্ৰষ্ট হইয়া দেশত্যাগিনী হইয়াছিল। বৈ । তোমার শ্বাশুড়ী এখানে আসিয়াছেন। তিনি আমার বাড়ীতে আছেন, তোমাকে একবার দেখবার জন্ত বড়ই কাদিতেছেন—আহা! হাজার হোক শ্বাশুড়ী । সে ত আর এখানে আসিয়া তোমাদের গিল্পীর কাছে সে “"তা তুমি একবার কেন আমার সঙ্গে গিয়ে তাকে দেখা দিয়ে এস না ? * কুন্দ সরলা হইলেও, বুঝিল যে, সে শ্বাশুড়ীর সঙ্গে সম্বন্ধ স্বীকারই অকৰ্ত্তব্য । অতএব বৈষ্ণবীর কথায় কেবল ঘাড় নাড়িয়া অস্বীকার করিল। কিন্তু বৈষ্ণবী ছাড়ে না—পুনঃপুনঃ উত্তেজনা করিতে লাগিল। তখন কুন্দ কহিল, “আমি গিল্পীকে না বলিয়া যাইতে পারিব না।” হরিদাসী মান করিল। বলিল, “গিল্পীকে বলিও না। যাইতে দিবে না । হয়ত তোমার শ্বাশুড়ীকে আনিতে পাঠাইবে । তাহা হইলে তোমার শ্বাশুড়ী দেশছাডু হইয়া পালাইবে।” বৈষ্ণবী যতই দাঢ্য প্রকাশ করুক, কুন্দ কিছুতেই সূৰ্য্যমুখীর অনুমতি ব্যতীত যাইতে সম্মত হইল না। তখন অগত্য হরিদাসী বলিল, “আচ্ছ। তবে তুমি গিল্পীকে ভাল করিয়া বলিয়া রেখ। আমি আর একদিন আসিয়া লইয়া যাইব ; কিন্তু দেখে, ভাল করিয়া বলে ; আর একটু কাদাকাটা করিও, নহিলে হইবে না।” কুন্দ ইহাতে স্বীকৃত হইল না, কিন্তু বৈষ্ণবীকে ই কি না, কিছু বলিল না। তখন হরিদাসী হস্তমুখপ্রক্ষালন সমাপ্ত করিয়া অন্ত সকলের কাছে ফিরিয়া আসিয়া পুরস্কার চাহিল। এমত সময়ে সেইখানে সূৰ্য্যমুখী আসিয়া উপস্থিত হইলেন। তখন বাজে কথা একেবারে বন্ধ হইল, অল্পবয়স্কারা সকলেই একটা একটা কাজ লইয়া বসিল ।