পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৫৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বিষবৃক্ষ বাচিব না । তোমার কাছে সকল কথা বলাও সোয়াস্তি।” কমল বলিলেন, “তোমার কাজ না করিয়া যাইব না।” সূৰ্য্যমুখী বলিলেন, “আমার কি কাজ করিবে ?” কমলমণি মুখে বলিলেন, “তোমার শ্রাদ্ধ,” মনে বলিলেন, “তোমার কণ্টকোদ্ধার ” কুন্দনন্দিনী কমলের যাওয়ার কথা শুনিয়া আপনার ঘরে গিয়া লুকাইয়। কঁাদিল, কমলমণি লুকাইয়া লুকাইয়া পশ্চাৎ পশ্চাৎ গেল। কুন্দনন্দিনী বালিশে মাথা দিয়া কাদিতেছে, কমলমণি তাহার চুল বঁাধিতে বসিল। চুল-বাধা কমলের একটা রোগ। চুল বাধা সমাপ্ত হইলে, কুন্দের মাথা তুলিয়, কমল তাহার মস্তক আপনার কোলে রাখিলেন। অঞ্চল দিয়া তাহার চক্ষু মুছাইয়া দিলেন । এই সব কাজ শেষ করিয়া, শেষে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কু দি, কাদিতেছিলি কেন ?” কুন্দ বলিল, “তুমি যাবে কেন ?” কমলমণি একটু হাসিলেন। কিন্তু ফোটা স্থই চক্ষের জল সে হাসি মানিল না— না বলিয়া কহিয়া তাহার কমলমণির গণ্ড বহিয়া হাসির উপর আসিয়া পড়িল । রৌদ্রের উপর বৃষ্টি হইল । কমলমণি বলিলেন, “তাতে কঁাদিস কেন ?” কুন্দ। তুমিই আমায় ভালবাস। ' কম। কেন—আর কেহ কি ভালবাসে না ? কুন্দ চুপ করিয়া রহিল। কম। কে ভালবাসে না ? গিল্পী ভালবাসে না—না ? আমায় লুকুস নে। কুন্দ নীরব। কমল । দাদাবাবু ভালবাসে না ? কুন্দ নীরব। কমল বলিলেন, “যদি আমি তোমায় ভালবাসি—আর তুমি আমায় ভালবাস, তবে কেন আমার সঙ্গে চল না ?” কুন্দ তথাপি কিছু বলিল না । কমল বলিলেন, “যাবে?” কুন্দ ঘাড় নাড়িল । “যাব না ।” - কমলের প্রফুল্ল মুখ গম্ভীর হইল। তখন কমলমণি সস্নেহে কুন্দনন্দিনীর মস্তক বক্ষে তুলিয়া লইয়া ধারণ করিলেন, - এবং সস্নেহে তাহার গণ্ডদেশ গ্রহণ করিয়া কহিলেন, “কুন্দ, সত্য বলিবি ?”