পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৬১

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Qく বিষবৃক্ষ ধীরে ধীরে তাহার পৃষ্ঠে অঙ্গুলিস্পর্শ করিল। বলিল, “কুন্দ ” কুন্দ দেখিল—সে অন্ধকারে দেখিবামাত্র চিনিল-নগেন্দ্র। কুন্দের সে দিন আর মরা হলো না। আর নগেন্দ্র । এই কি তোমার এত কালের সুচরিত্র ? এই কি তোমার এত কালের শিক্ষা ? এই কি সূৰ্য্যমুখীর প্রাণপণ প্রণয়ের প্রতিফল! ছি ছি! দেখ তুমি চোর। চোরের অপেক্ষাও হীন। চোর সূৰ্য্যমুখীর কি করিত ? তাহার গহনা চুরি করিত, অর্থহানি করিত, কিন্তু তুমি তাহার প্রাণহানি করিতে আসিয়াছ। চোরকে সূৰ্য্যমুখী কখন কিছু দেয় নাই ; তবু সে চুরি করিলে চোর হয়। আর সূৰ্য্যমুখী তোমাকে সৰ্ব্বস্ব দিয়াছে—তবু তুমি চোরের অধিক চুরি করিতে আসিয়াছ ! নগেন্দ্র, তুমি মরিলেই ভাল হয়। যদি সাহস থাকে, তবে তুমি গিয়া ডুবিয়া মর। আর ছি! ছি ! কুন্দনন্দিনি! তুমি চোরের স্পর্শে কঁাপিলে কেন ? ছিঃ! ছি! কুন্দনন্দিনি –চোরের কথা শুনিয়া তোমার গায়ে কাটা দিল কেন ? কুন্দনন্দিনি –দেখ পুষ্করিণীর জল পরিষ্কার, সুশীতল, মুবাসিত—বায়ুর হিল্লোলে তাহার নীচে তারা কঁাপিতেছে। ডুবিবে ? ডুবিয়া মর না ? কুন্দনন্দিনী মরিতে চাহে না। চোর বলিল, “কুন্দ! কলিকাতায় যাইবে ?” কুন্দ কথা কহিল না—চক্ষু মুছিল—কথা কহিল না। চোর বলিল, “কুন্দ ! ইচ্ছাপূৰ্ব্বক যাইতেছ?” ইচ্ছাপূর্বক ! হরি । হরি । কুন্দ আবার চক্ষু মুছিল—কথা কহিল না। “কুন্দ—কাদিতেছ কেন ?” কুন্দ এবার র্কাদিয়া ফেলিল। তখন নগেন্দ্র বলিতে লাগিলেন, “শুন কুন্দ ! আমি বহু কষ্টে এত দিন সহ করিয়াছিলাম, কিন্তু আর রিলাম ন। কি কষ্টে যে বাচিয়া আছি, তাহ বলিতে পারি না । আপনার সঙ্গে যুদ্ধ করিয়া আপনি ক্ষত বিক্ষত হইয়াছি। ইতর হইয়াছি, মদ খাই । আর পারি না। তোমাকে ছাড়িয়া দিতে পারি না। শুন, কুন্দ ! এখন বিধবাবিবাহ চলিত হইতেছে—আমি তোমাকে বিবাহ করিব। তুমি বলিলেই বিবাহ করি।” কুন্দ এবার কথা কহিল। বলিল, “না।” আবার নগেন্দ্র বলিলেন, “কেন, কুন্দ । বিধবার বিবাহ কি অশাস্ত্র ?” কুন্দ আবার বলিল, “না।” নগেন্দ্র বলিল, “তবে না কেন ? বল বল—বল—আমার গৃহিণী হইবে কি না ? আমার ভালবাসিবে কি না ?” خیبر vं)