পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৮৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

চতুৰ্বিবংশ পরিচ্ছেদ : অবতরণ ዓቖ দে। একেই বলে স্ত্রীচরিত্র । হীরা রাগিল—বলিল, “স্ত্রীচরিত্র ? স্ত্রীচরিত্র মন্দ নহে। তোমাদিগের দ্যায় পুরুষের চরিত্রই অতি মন্দ। তোমাদের ধৰ্ম্মজ্ঞান নাই—পরের ভাল মন্দ বোধ নাই— কেবল আপনার সুখ খুজিয়া বেড়াও—কেবল কিসে কোন স্ত্রীলোকের সর্বনাশ করিবে,সেই চেষ্টায় ফের। নহিলে কেন তুমি আমার বাড়ীতে বসিলে ? আমার সর্বনাশ করিবে, তোমার কি এ অভিপ্রায় ছিল না ? তুমি আমাকে কুলটা ভাবিয়াছিলে, নহিলে কোন সাহসে বসিবে ? কিন্তু আমি কুলটা নহি । আমরা দুঃখী লোক, গতর খাটাইয়া খাই— কুলটা হইবার আমাদের অবকাশ নাই—বড়মানুষের বউ হইলে কি হইতাম, বলিতে পারি না ।” দেবেন্দ্র ক্রভঙ্গি করিলেন। দেখিয়া হীরা প্রীত হইল। পরে উন্নমিতাননে দেবেন্দ্রের প্রতি স্থিরদৃষ্টি করিয়া কোমলতর স্বরে কহিতে লাগিল, “প্রভু, আমি আপনার রূপগুণ দেখিয়া পাগল হইয়াছি। কিন্তু আমাকে কুলটা বিবেচনা করিবেন না। আমি আপনাকে দেখিলেই সুখী হই। এজন্য আপনি আমার ঘরে বসিতে চাহিলে বারণ করিতে পারি নাই—কিন্তু অবলা স্ত্রীজাতি—আমি বারণ করিতে পারি নাই বলিয়া কি আপনার বসা উচিত হইয়াছে ? আপনি মহাপাপিষ্ঠ, এই ছলে ঘরে প্রবেশ করিয়া আমার সর্বনাশ করিতে চেষ্টা করিয়াছেন। এখনি আপনি এখান হইতে যান ।” দেবেন্দ্র আর এক ঢোক পান করিয়া বলিলেন, “ভাল, ভাল! হীরে, তুমি ভাল বক্তৃতা করিয়াছ । আমাদের ব্রাহ্মসমাজে এক দিন বক্তৃতা দিবে ?” হীরা এই উপহাসে মৰ্ম্মপীড়িত হইয়া, রোষকাতরস্বরে কহিল, “আমি আপনার উপহাসের যোগ্য নই—আপনাকে অতি অধম লোকে ভালবাসিলেও, তাহার ভালবাসা লইয়া তামাসা করা ভাল নয়। আমি ধাৰ্ম্মিক নহি, ধৰ্ম্ম বুঝি না—ধৰ্ম্মে আমার মন নাই। তবে যে আমি কুলটা নই বলিয়া স্পৰ্দ্ধা করিলাম, তাহার কারণ এই, আমার মনে মনে প্রতিজ্ঞা আছে, আপনার ভালবাসার লোভে পড়িয়া কলঙ্ক কিনিব না। যদি আপনি আমাকে একটুকুও ভালবাসিতেন, তাহা হইলে আমি এ প্রতিজ্ঞা করিতাম না—আমার ধৰ্ম্মজ্ঞান নাই, ধৰ্ম্মে ভক্তি নাই—আমি আপনার ভালবাসার তুলনায় কলঙ্ককে তৃণজ্ঞান করি। কিন্তু আপনি ভালবাসেন না—সেখানে কি মুখের জন্য কলঙ্ক কিনিব ? কিসের লোভে আমার গৌরব ছাড়িব ? আপনি যুবতী স্ত্রী হাতে পাইলে কখন ছাড়েন না, এজন্য আমার পূজা গ্রহণ করিলেও করিতে পারেন, কিন্তু কালে আমাকে হয়ত ভুলিয়া যাইবেন, নয়ত যদি মনে রাখেন, তবে আমার কথা লইয়া দলবলের কাছে উপহাস করিবেন—এমন