পাতা:বিষবৃক্ষ-বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়.djvu/৯৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বিষবৃক্ষ ای কহিলেন। সতীশচন্দ্রের বিদ্যাশিক্ষ, বিবাহ ইত্যাদি বিষয়ে অনেক স্বখের কথার আলোচনা ইষ্টল। এইরূপ গভীর রাত্ৰি পৰ্য্যন্ত উভয়ে কথোপকথন করিয়া সূৰ্য্যমুখী কমলকে স্নেহভরে - আলিঙ্গন করিলেন এবং সতীশচন্দ্রকে ক্রোড়ে লইয়া মুখচুম্বন করিলেন। উভয়কে বিদায় দিবার কালে সূৰ্য্যমুখীর চক্ষের জল আবার অসম্বরণীয় হইল। রোদন করিতে করিতে তিনি সতীশকে আশীৰ্ব্বাদ করিলেন, “বাবা । আশীৰ্ব্বাদ করি, যেন তোমার মামার মত অক্ষয় গুণে গুণবান হও । ইহার বাড়া আশীৰ্ব্বাদ আমি আর জানি না।” সূৰ্য্যমুখী স্বাভাবিক মৃত্স্বরে কথা কহিয়াছিলেন, তথাপি তাহার কণ্ঠস্বরের ভঙ্গীতে কমলমণি চমকিয়া উঠিলেন । বলিলেন, “বউ । তোমার মনে কি হইতেছে—কি ? বল না ?” সু। কিছু না । কম। আমার কাছে লুকাইও না। স্থ। তোমার কাছে লুকাইবার আমার কোন কথাই নাই। কমল তখন স্বচ্ছন্দচিত্তে শয়নমন্দিরে গেলেন। কিন্তু সূৰ্য্যমুখীর একটি লুকাইবার কথা ছিল। তাহ কমল প্রাতে জানিতে পারিলেন। প্রাতে সূৰ্য্যমুখীর সন্ধানে তাহার শয্যাগৃহে গিয়া দেখিলেন, সূৰ্য্যমুখী তথায় নাই, কিন্তু অভূক্ত শয্যার উপরে একখানি পত্র পড়িয়া আছে। পত্র দেখিয়াই কমলমণির মাথা ঘুরিয়া গেল—পত্র পড়িতে হইল না—না পড়িয়াই সকল বুঝিলেন। বুঝিলেন, সূৰ্য্যমুখী পলায়ন করিয়াছেন। পত্র খুলিয়া পড়িতে ইচ্ছা হইল না—তাহ করতলে বিমৰ্দ্দিত করিলেন । কপালে করাঘাত করিয়া শয্যায় বসিয়া পড়িলেন। বলিলেন, “আমি পাগল। নচেৎ কাল ঘরে যাইবার সময়ে বুঝিয়াও বুঝিলাম না কেন ?" সতীশ নিকটে দাড়াইয়াছিল ; মার কপালে করাঘাত এ রোদন দেখিয়া সেও কঁাদিতে লাগিল । অষ্টাবিংশ পরিচ্ছেদ আশীৰ্ব্বাদ-পত্ৰ শোকের প্রথম বেগ সম্বরণ হইলে, কমলমণি পত্র খুলিয়া পড়িলেন। পত্ৰখানির শিরোনামায় তাহারই নাম। পত্র এইরূপ — “যে দিন স্বামীর মুখে শুনিলাম যে আমাতে আর তার কিছুমাত্র মুখ নাই, তিনি কুন্দনন্দিনীর জন্য উন্মাদগ্ৰস্ত হইবেন, অথবা প্রাণত্যাগ করিবেন, সেই দিনেই মনে মনে