মদিনার সিংহাসনের যথার্থ উত্তরাধিকারী যিনি, তাঁহারই নামে খোৎবা পাঠ হইল। খতিবের[১] মুখে কেহ এজিদের নাম শুনিল না, পূর্ব্বেও যে নাম, এখনও সেই হোসেনের নাম স্পষ্ট শুনিল।
মোহাম্মদীয়গণ মনের আবেগে আনন্দ-উল্লাসে ‘জয় জয়’ শব্দ করিয়া উঠিল। এজিদপক্ষীয়গণ ক্রোধে অগ্নিমুর্ত্তি হইয়া জয়নাল আবেদীনকে নানা প্রকার কটুবাক্যে ভর্ৎসনা করিতে করিতে ভজনালয় হইতে বাহির হইল।
নিষ্কোষিত অসিহস্তে এজিদ ক্রোধে অধীর। কম্পিত-কলেবরে কর্কশস্বরে অসির ঝনঝন্ শব্দের সহিত রসনা সঞ্চালন করিয়া তিনি বলিলেন, “এখনই জয়নালের শিরশ্চেদ করিব। এত চাতুরী আমার সঙ্গে?”
মারওয়ান বলিতে লাগিল, “বাদশাহ্-নামদার! আশাসিন্ধু এখনও পার হই নাই। বহুদুর আসিয়াছি বলিয়া ভরসা হইয়াছে;—অচিরেই তীরে উঠিব। কিন্তু মহারাজ। আজ যে একটা গোপনীয় কথা শুনিয়াছি, তাহাতে জয়নাল আবেদীনের জীবন শেষ করিলেও এমামবংশ সমুলে বিনাশ হইবে না, বরং সমরানল সতেজে জ্বলিয়া উঠিবে। সে দুর্দ্দান্ত প্রমত্ত বারণকে মারওয়ান যত দিন কৌশলাঙ্কুশে হোসেনের দাদ-উদ্ধার পর্য্যবেক্ষণ হইতে নিবারণ করিতে না পারিবে, ততদিন মারওয়ানের মনে শান্তি নাই, আপনার জীবনে আশা নাই।”
এজিদ মৃত্তিকায় তরবারি নিক্ষেপ করিয়া বলিলেন, “সে কি কথা! হোসেনবংশে এখনও প্রমত্ত কুরসম বীরশ্রেষ্ঠ বীর আছে! আমি ত আর কাহাকেও দেখিতে পাই নাই?”
মারওয়ান বলিল, “জয়নালকে নির্দিষ্ট বন্দীগৃহে প্রেরণ করিবার আদেশ হউক। আমি সে গুপ্তকথা—নিগূঢ়-তত্ত্ব এখনই বলিতেছি।”
- ↑ খতিব—যে খোৎবা পাঠ করে