বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কৈফিয়ত S O (t রচনার পদ্ধতি ও রীতি সবই পৃথক। পদের নির্বাচন ও তার বিন্যাস প্ৰতি লেখক নিজের রুচি অনুসারেই করে থাকেন। কাল যখন কলি, তখন লেখবার কলও নিশ্চয় রচিত হবে ; কিন্তু ইতিমধ্যে সবুজ পত্রের সম্পাদক যে সে-কলের সন্ধানলাভ করেছেন, এমন তো মনে হয় না। সকলের মনোভাব আর-কিছু একই ভাষার ছাচে ঢালাই করা যেতে পারে না। মানুষের জীবনের ও মনের ছাঁচ তৈয়ারি করা যাদের ব্যাবসা, তারা অবশ্য এ কথা স্বীকার করবেন না ; তা হলেও কথাটি সত্য। ‘সংগচ্ছদ্ধং এই বৈদিক বিধির কর্মজীবনে যথেষ্ট সার্থকতা আছে। কিন্তু ‘সংবাদদ্ধং” এই বিধির সাহিত্যে বিশেষ-কোনো সার্থকতা নেই। এই কারণেই সাহিত্যের প্রতি-লেখককেই তঁর নিজের মনোভাব নিজের মনোমত ভাষায় প্ৰকাশ করবার স্বাধীনতা দেওয়া আবশ্যক। ‘সবুজ পত্রে' লেখকদের সে স্বাধীনতা যে আছে, তা উদাহরণের সাহায্যে দেখানো যেতে পারে। অতএব ধরে নেওয়া যেতে পারে যে, সবুজ পত্রের নয়, আমার ভাষার উপরেই পালমহাশয় আক্রমণ করেছেন। আমার ভাষার রোগ মারাত্মক হতে পারে, কিন্তু তা সংক্ৰামক নয়। এক সবুজ পত্রের সম্পাদক ব্যতীত আর-কেউই আমার পথানুসরণ কিংবা পদানুকরণ করেন না। পালমহাশয় বঙ্গসাহিত্যের সর্বোচ্চ আদালতে আমার ভাষার বিরুদ্ধে যে নালিশ রুজু করেছেন, সম্ভবত তার একতরফা ডিগ্রি হয়ে গেছে ; কেননা, সে সময়ে আমি সে ক্ষেত্রে উপস্থিত ছিলুম না। উপস্থিত খাকলে যে মামলা ডিসমিস করিয়ে নিতে পারতুম, তা নয়। পালমহাশয় বাক্যজগতে মহাবলী এবং মহাবলিয়ে। আমার এতাদৃশ বাকপটুতা নেই যে, আমি তাঁর সঙ্গে বাগযুদ্ধে প্ৰবৃত্ত হতে সাহসী হই। আৱজি যদি লিখিত হয়, তা হলে হয় তার লিখিতজবাব নয় কবুল-জবাব দেওয়া যায়। কিন্তু বক্তৃতা হল ধূম জ্যোতি সলিল ও মরুতের সন্নিপাত । উড়ো-কথার সঙ্গে কেন্দল করতে হলে হাওয়ায় ফাদা পাতা আবশ্যক ; সে বিদ্বেন্ত আমার নেই। তবে পালমহাশয় যখন এ দেশের এ যুগের একজন অগ্রগণ্য গুণী, তখন তিনি আমাদের ন্যায় নগণ্য লেখকের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ উপস্থিত করলে আমরা তার কৈফিয়ত দিতে বাধ্য। সংবাদপত্রের সংক্ষিপ্ত রিপোর্ট থেকে ঠিক বোঝা গেল না যে, আমার ভাষার বিরুদ্ধে পালমহাশয়ের অভিযোগটি কী। আমি পূর্বেই স্বীকার করেছি যে, আমার ভাষা আর-পাঁচজনের ভাষা হতে ঈষৎ পৃথক। কিন্তু এই স্বাতন্ত্র্য দোষ বলে গণ্য হতে পারে না। 'কিং স্বাতন্ত্র্যম অবলম্বসে’- এ ধমক সাহিত্যসমাজে কোনো গুরুজন কোনো ক্ষুদ্রজনকে দিতে যে অধিকারী নন, পালমহাশয়ের ন্যায় বিদ্বান ও বুদ্ধিমান ব্যক্তির নিকট তা কখনোই অবিদিত নেই। তার পর কেউ-কেউ বলেন যে আমি খাটি