Y o byr বীৱবলের হালখাতা আসল কথা, ভাষার বিচার শুধু বাগবিতণ্ডায় পরিণত হয়, যদি-না। আমরা ধরতে পারি যে, তথাকথিত সাধুভাষার সঙ্গে তথাকথিত অসাধুভাষার পার্থক্যটি কোথায় এবং কতদূর । শ্ৰীযুক্ত রমাপ্রসাদ চন্দ বলেছেন যে, আর-পাঁচজনে যে ভাষায় লেখেন, আমিও সেই একই ভাষায় লিখি ; তফাত এইটুকু যে, ক্রিয়াপদ এবং সর্বনামের ব্যবহার আমি মৌখিক ভাষার অনুরূপই করে থাকি। চন্দমহাশয়ের মত আমি শিরোধাৰ্য করি ; কেননা, তার এ কথা সম্পূর্ণ সত্য। আমি ‘তাহার” পরিবর্তে “তার’ লিখি, অর্থাৎ সাধু সর্বনামের হৃদয়ের হা বাদ দিই। "হায় হায়’ বাদ দিলে বাংলায় যে পদ্য হয় না, তা জানি ; কিন্তু ‘হা হা’ বাদ দিলে যে গদ্য হয় না, এ ধারণা আমার ছিল না । এ বিষয়ে কিন্তু পালমহাশয় আমার সঙ্গে একমত ; কেননা, তার লেখাতেও উক্ত হ’ উহ্য থেকে যায়। শেষটা দাড়াল এই যে, পালমহাশয়ের ভাষার সঙ্গে আমার ভাষার যা-কিছু প্ৰভেদ, তা হচ্ছে ক্রিয়ার বিভক্তিগত । আমি লিখি “করে”, তিনি লেখেন ‘করিয়া” । “করে’র বদলে “করিয়া’ লিখলেই যে ভাষা সুমার্জিত হয়ে ওঠে, এ বিশ্বাস আমার থাকলে আমি সাহিত্যে সাধুপথ কখনোই ত্যাগ করতুম না। আমার বিশ্বাস, অত সস্তা উপায়ে সুলেখক হওয়া যায় না, কেননা, এক স্বরবর্ণের গুণে শব্দের ব্যঞ্জনাশক্তি তাদৃশ বৃদ্ধিলাভ করে না । শ্ৰীযুক্ত অক্ষয়চন্দ্র সরকার তার অভিভাষণে বলেছেন যে, “এ এ’ আর ‘ইয়ে ইয়ে” এ দুয়ের ভিতর ভাষার কোনো প্ৰভেদ নেই, প্ৰভেদ যা আছে তা বানানের। এ কথা যদি সত্য হয়, এবং আমার বিশ্বাস তা সত্য, তা হলে পালমহাশয়ের আমার 3] {ܡ[ উপর যে আক্রমণ, তা আসলে বানানের উপরে গিয়েই পড়েছে। বানান আমার কাছে চিরদিনই একটি মহা সমস্যা, এবং সে সমস্যার উত্তর-মীমাংসা করা আমার সাধ্যের অতীত। অসাধুভাষার বিপদ যেমন এই বানানের দিকে, সাধুভাষারও বিপদ তেমনি বানানোর দিকে। ও ভাষায় লিখতে বসলে যখন পালমহাশয়ের চাচা কলমের মুখ ফসকে “আমরণ পৰ্যন্ত বঁচিয়াছিল’ এইরূপ বাক্য বেরিয়ে পড়ে, তখন আমার কঁচা কলমের উপর ভরসা কি ? এহেন সাধুহস্ত হতে মুক্তিলাভ না করলে বঙ্গসরস্বতী *আমরণ পৰ্যন্ত বঁচিয়া’ নয়, মরিয়াই থাকিবে । ऊनि »७२»
পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১০৬
অবয়ব