পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S A 3 বীরবিলের হালখাতা সে সম্বন্ধে কোনো সন্দেহ নেই।), তা হলে মানবজাতি এই চুড়ান্ত মীমাংসায় উপনীত হবে যে, যুদ্ধ অকর্তব্য। আর-একটি কথা, পুরুষমানুষে যুদ্ধ-রূপ প্ৰচণ্ড বিবাদ কখনোকখনো করে, কিন্তু লেখিকার স্বজাতিই হচ্ছে সকল নিত্যনৈমিত্তিক বিবাদের মূল। এর জন্য আমাদের বুদ্ধি কিংবা তাদের হৃদয় দায়ী, তার বিচার আমি করতে চাই নে। আমরা মনসা হতে পারি, কিন্তু ধুনোর গন্ধ ওঁরাই জোগান। ওঁরা উসকে দিয়ে পুরুষকে যে পরিমাণে “বীরপুরুষ’ করে তুলতে পারেন, তা কোনো দর্শন বিজ্ঞানে পারে না। তবে যে লেখিকা। শমদম প্রভৃতি সদগুণে নিজেদের বিভূষিত মনে করেন, সে ভুল ধারণার জন্যও দায়ী আমরা। আমি পূর্বে বলেছি যে, স্ত্রীজাতিকে আমরা সমাজে གསོག་ཅ། ༈་རྗེ་ নি, কিন্তু সাহিত্যে দিয়েছি। এ কাজটি ন্যায় হলেও সেইসঙ্গে একটি অন্যায় কাজও আমরা করেছি। আমাদের সমাজে স্ত্রীজাতির কোনোরূপ মৰ্যাদা নেই, কিন্তু সাহিত্যে যথেষ্টর চাইতেও বেশি আছে। এর কারণ, সকল সমাজের উপর হিন্দু সমাজের শ্রেষ্ঠত্ব প্ৰমাণ করতে হলে তোমাদের গুণকীর্তন করা ছাড়া আর আমাদের উপায়ান্তর নেই। আমাদের নিজের বিষয় মুখ ফুটে অহংকার করা চলে না ; কেননা, আমাদের দেহমনের দৈন্য বিশ্বমানবের কাছে প্ৰত্যক্ষ ; সুতরাং আমরা বলতে বাধ্য যে, আমাদের সমাজের সকল ঐশ্বৰ্য অন্তঃপুরের ভিতর চাবি-দেওয়া আছে। এ-সব কথার উদ্দেশ্য আমাদের নিজের মন-জোগানো এবং পরের মন-ভোলানো । ও হচ্ছে তোমাদের নামে বেনামি করে আমাদের আত্মপ্ৰশংসা করা । সুতরাং, যদি মনে কর, ঐ-সব প্ৰশংসিত গুণে তোমাদের কোনো স্বত্ব জন্মেছে, তা হলে তোমরা যে-তিমিরে আছে, সেই-তিমিরেই থাকবে। কাৰ্তিক ১৩২১