পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১২৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Itz- বীরবলের হালখাতা শাস্ত্রীমহাশয় বলেন যে, বাঙালি-ব্ৰাহ্মণ বুদ্ধিমান বলে বেদাভ্যাস করেন না। কর্ণবেধের জন্য যতটুকু বেদ দরকার, ততটুকুই এ দেশে ব্ৰাহ্মণসন্তানের করায়ত্ত। অথচ বাঙালি বেদপাঠ না করেও এ কথা জানে যে, ঋক হচ্ছে ছোটো কবিতা এবং সাম গান। সুতরাং আমরা যখন ছোটো কবিতা ও গান রচনা করি, তখন আমরা ভারতবর্ষের কাব্যরচনার সনাতন রীতিই অনুসরণ করি। শাস্ত্রীমহাশয় মুখে যাই বলুন, কাজে তিনি চুটুকিরই পক্ষপাতী। তিনি আজীবন চুটুকিতেই গল সোধেছেন, চুটুকিতেই হাত তৈরি করেছেন, সুতরাং কী লেখায়, কী বক্তৃতায়, আমরা তার এই অভ্যস্ত বিদ্যারই পরিচয় পাই। তিনি বাঙালির যে বিংশপর্ব মহাগৌরব রচনা করেছেন, তা ঐতিহাসিক চুটুকি বৈ আর-কিছুই নয় ; অন্তত সে রচনাকে শ্ৰীযুক্ত যদুনাথ সরকার মহাশয় অন্য কোনো নামে অভিহিত कge = । এ কথা নিশ্চিত যে, তিনি সরকার মহাশয়ের প্রদর্শিত পথ অনুসরণ করেন নি, সম্ভবত এই বিশ্বাসে যে, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি অনুসারে আবিষ্কৃত সত্য বাঙালির পক্ষে পুষ্টিকর হতে পারে, কিন্তু রুচিকর হবে না। সরকার মহাশয় বলেন যে, এ দেশের ইতিহাসের সত্য যতই অপ্ৰিয় হোক বাঙালিকে তা বলতেও হবে, শুনতেও হবে । অপর পক্ষে শাস্ত্রীমহাশয়ের উদ্দেশ্য তাঁর রচনা লোকের মুখরোচক করা, এবং সেই উদ্দেশ্য সাধন করবার জন্য তিনি নানারকম সত্য ও কল্পনা একসঙ্গে মিলিয়ে ঐতিহাসিক সাড়ে-বাত্রিশ-ভাজার সৃষ্টি করেছেন। ফলে এ রচনায় যে মাল আছে, তাও মসলা থেকে পৃথক করে নেওয়া যায় না। শাস্ত্রীমহাশয়ের কথিত বাংলার পুরাবৃত্তের কোনো ভিত্তি আছে কি না বলা কঠিন। তবে এ ইতিহাসের যে গোড়াপত্তন করা হয় নি, সে বিষয়ে আর দ্বিমত নেই। ইতিহাসের ছবি আঁকতে হলে প্ৰথমে ভূগোলের জমি করতে হয়। কোনো-একটি দেশের সীমার মধ্যে কালকে আবদ্ধ না করতে পারলে সে-কালের পরিচয় দেওয়া যায় না । অসীম আকাশের জিয়োগ্রাফি নেই, অনন্ত কালেরও হিস্টরি নেই। কিন্তু শাস্ত্রীমহাশয় সেকালের বাঙালির পরিচয় দিতে গিয়ে সেকালের বাংলার পরিচয় দেন নি, ফলে গৌরবটা উত্তরাধিকারী-স্বত্বে আমাদের কি অপরের প্রাপ্য- এ বিষয়েও সন্দেহ থেকে যায়। শাস্ত্ৰীমহাশয়ের শক্ত হাতে পড়ে দেখতে পাচ্ছি অঙ্গ ভয়ে বঙ্গের ভিতর সেঁধিয়েছে ; কেননা, যে ‘হস্ত্যায়ুৰ্বেদ’ আমাদের সর্বপ্রথম গৌরব, সে শাস্ত্ৰ অঙ্গরাজ্যে রচিত হয়েছিল। বাংলার লম্বাচোঁড়া । অতীতের গুণবর্ণনা করতে হলে বাংলাদেশটাকেও একটু লম্বাচোঁড়া করে নিতে হয়, সুম্ভবত সেইজন্য শাস্ত্রীমহাশয় আমাদের পূর্বপুরুষদের হয়ে অঙ্গকেও বেদখল করে