বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

SV8 বীরবলের হালখাতা হন, যিনি কোনোরূপ কাৰ্য-উদ্ধারের অভিপ্ৰায়ে লেখনী ধারণ করেন, তিনি গীতের মৰ্মও বোঝেন না, গীতার ধর্মও বোঝেন না ; কেননা, খেলা হচ্ছে জীবজগতের একমাত্র নিষ্কাম কর্ম, অতএব মোক্ষলাভের একমাত্র উপায়। স্বয়ং ভগবান বলেছেন, যদিচ র্তার কোনোই অভাব নেই। তবুও তিনি এই বিশ্ব স্বজন করেছেন, অর্থাৎ স্বষ্টি তার লীলামাত্র। কবির সৃষ্টিও এই বিশ্বসৃষ্টির অনুরূপ, সে স্বজনের মূলে কোনো অভাব দূর করবার অভিপ্ৰায় নেই- সে সৃষ্টির মূল অন্তরাত্মার স্মৃতি এবং তার ফুল আনন্দ। এক কথায় সাহিত্যসৃষ্টি জীবাত্মার লীলামাত্র, এবং সে লীলা বিশ্বলীলার অন্তভূতি ; কেননা, জীবাত্মা পরমাত্মার অঙ্গ এবং অংশ। V সাহিত্যের উদ্দেশ্য সকলকে আনন্দ দেওয়া, কারো মনোরঞ্জন করা নয়। এ দুয়ের ভিতর যে আকাশ-পাতাল প্ৰভেদ আছে, সেইটি ভুলে গেলেই লেখকেরা নিজে খেলা না করে পরের জন্যে খেলনা তৈরি করতে বসেন। সমাজের মনোরঞ্জন করতে গেলে সাহিত্য যে স্বধৰ্মচ্যুত হয়ে পড়ে, তার প্রমাণ বাংলাদেশে আজ দুর্লভ নয়। কাব্যের ঝুমঝুমি, বিজ্ঞানের চুষিকাঠি, দর্শনের বেলুন, রাজনীতির রাঙালাঠি, ইতিহাসের ন্যাকড়ার পুতুল, নীতির টিনের ভোপু এবং ধর্মের জয়ঢাক- এই-সব জিনিসে সাহিত্যের বাজার ছেয়ে গেছে। সাহিত্যরাজ্যে খেলনা পেয়ে পাঠকের মনস্তুষ্টি হতে পারে কিন্তু তা গড়ে লেখকের মনস্তুষ্টি হতে পারে না । কারণ পাঠকসমাজ যে খেলনা আজি আদর করে, কাল সেটিকে ভেঙে ফেলে ; সে প্ৰাচ্যই হোক আর পাশ্চাত্যই হোক, কাশীরই হোক আর জার্মানিরই হোক, দুদিন ধরে তা কারো মনোরঞ্জন করতে পারে না। আমি জানি যে, পাঠকসমাজকে আনন্দ দিতে গেলে তঁরা প্ৰায়শই বেদনা বোধ করে থাকেন। কিন্তু এতে ভয় পাবার কিছুই নেই ; কেননা, কাব্যজগতে যার নাম আনন্দ, তারই নাম বেদনা। সে যাই হোক, পরের মনোরঞ্জন করতে গেলে সরস্বতীর বরপুত্ৰও যে নটবিটের দলভুক্ত হয়ে পড়েন, তার জাজ্বল্যমান প্ৰমাণ স্বয়ং ভারতচন্দ্র। কৃষ্ণচন্দ্রের মনোরঞ্জন করতে বাধ্য না হলে তিনি বিদ্যাসুন্দর রচনা করতেন না, কিন্তু তার হাতে বিদ্যা ও সুন্দরে অপূর্ব शिलम जरक्षउि RVS ; GK Ral, knowledge এবং art উভয়ই তাঁর সম্পূর্ণ করায়ত্ত ছিল। ‘বিদ্যান্বন্দর’ খেলনা হলেও রাজার বিলাসভবনের পাঞ্চালিকা- সুবৰ্ণে গঠিত, সুগঠিত এবং মণিমুক্তায় অলংকৃত, তাই আজও তার যথেষ্ট মূল্য আছে, অন্তত জহুরীর কাছে। অপর পক্ষে, এ যুগে পাঠক হচ্ছে জনসাধারণ ; সুতরাং তঁদের মনোরঞ্জন করতে হলে আমাদের অতি সন্তা খেলনা