পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৩৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

কনগ্রেসের আইডিয়াল ১৮৮৫ খৃস্টাব্দে বোম্বাই-বন্দরে কনগ্রেসের জন্ম হয়। ১৯০৬ খৃস্টাব্দে কলিকাতাশহরে তা সাবালক হয়। তার পরবৎসর সুরাট-নগরীতে তার মৃত্যু হয়। এ বৎসর আবার তার জন্মস্থানে তার পুনর্জন্ম হয়েছে। এবার কিন্তু কনগ্রেসের ধড়ে প্ৰাণ আসে নি তার প্রাণে ধড় এসেছে। সকলেই জানেন, সুরাটে কনগ্রেসের মৃত্যু হয় নি, তার অপমৃত্যু ঘটেছিল ; আর সে যেমনতেমন অপমৃত্যু নয়- একসঙ্গে খুন এবং আত্মহত্যা। এ দেশে কারো অপমৃত্যু ঘটলে তাঁর আত্মার ততদিন সদগতি হয় না, যতদিন-না তা আবার একটি নূতন দেহে প্ৰবেশলাভ করতে পারে। কনগ্রেসের সূক্ষ্ম শরীর তাই এই কয় বৎসর একটি স্কুল শরীরের তল্লাসে এদেশে-ওদেশে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, অতঃপর বোম্বাই-ধামে তা লাভ করেছে। গত কনগ্রেসে বিশ হাজার লোক জমায়েত হয়েছিল। কনগ্রেসওয়ালদের মতে কিন্তু কনগ্রেসের কস্মিনকালেও মৃত্যু হয় নি; সুরাটে শুধু স্বরাট পাগল হয়ে কনগ্রেসকে জখম করে নিজে করেছিলেন আত্মহত্যা। তার পর, যেহেতু সে স্বরাট কনগ্রেসেই জন্মলাভ করেছিল, সেইজন্য তার ভূত তার জন্মদাতার স্কন্ধে ভর করবার চেষ্টায় ফিরছিল। সেই ভূতের ভয়ে কনগ্রেস এতদিন ঘরের দুয়োর বন্ধ করে বসেছিল। এই বন্ধ ঘরের দুষিত বায়ুতেই তার শরীর কাহিল হয়ে গিয়েছিল। অথচ কনগ্রেস এই ভূতের উপদ্রব থেকে নিষ্কৃতি পাবার কোনো উপায় বার করতে পারে নি। এবার নবমন্ত্রের বলে স্বরাটের ভূত, ভবিষ্যৎ হয়ে গেছে। তাই কনগ্রেসের দেহটি আবার নাদুশনুদুশ হয়ে উঠেছে। এক কথায় কনগ্রেস এবার বেঁচে ওঠে নি, বেঁচে গিয়েছে। সে যাই হোক, কনগ্রেসের এবার ভোল ফিরেছে এবং সেইসঙ্গে তার বোল ফিরেছে। এতদিন কনগ্রেস ছিল বড়েদিনের দুর্গোৎসব ; তিনদিন ধরে “ধনং দেহি মানং দেহি’ বলে দু’সন্ধ্যা ইংরেজিতে মন্ত্র অ্যাওডানো এবং সেই উপলক্ষে খানা-পিন নাচ-তামাশা আমোদ-আহলাদ, এবং তার পরে বিসর্জন, এবং তার পরে কনগ্রেসওয়ালাদের পরস্পর-কোলাকুলি করে গৃহাভিমুখে যাত্রা- এই ছিল কনগ্রেসের হাল ও চাল । ভবিষ্যতে শুনছি কনগ্রেসের সপ্তমী অষ্টমী নবমী থাকবে, কিন্তু দশমীতেই সব শেষ হবে না। তার পর বারোমাস ধরে কনগ্রেস তার স্বধৰ্ম প্রচার করবে। অর্থাৎ কনগ্রেস এবার জাতীয়-রাজনৈতিক-শিক্ষা-পরিষদে পরিণত হল। কনগ্রেসের এ সংকল্প