পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৪০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Y 8R বীরবলের হালখাতা অতি সাধুসংকল্প সন্দেহ নেই ; কিন্তু যে বিষয়ে সন্দেহ আছে তা হচ্ছে এই যে, এ ংকল্প কাৰ্যে পরিণত হবে কি না। প্ৰথমত রাজনীতি বলতে যা বোঝায়, তা দেশসুদ্ধ লোককে বোঝানো কঠিন। ও-পদাৰ্থ আমরা ইউরোপ থেকে আমদানি করেছি। সে দেশে এ কালে ও-বস্তু হচ্ছে তাই, যার ভিতর এক দিক দিয়ে দেখতে গেলে রাজাও নেই, নীতিও নেই ; আবার “আর-এক দিক দিয়ে দেখতে গেলে, ও-দুইই আছে। এই দুটো দিক যাতে একসঙ্গে চোখে পড়ে, এমন করে দেশের চোখ-ফোটানোর জন্য যে জ্ঞানাঞ্জনশলাকার আবশ্যক, তা দেশী ভাষা নয়। ব্ৰহ্ম যে একাধারে সগুণ এবং নিগুৰ্ণ, এ সত্য বোঝাতে হলে যেমন সংস্কৃতভাষার সাহায্য চাই- তেমনি রাজনীতি যে একসঙ্গে রাজমন্ত্র এবং প্ৰজাতন্ত্র হতে পারে, এ সত্য বোঝাতে হলে ইংরেজির সাহায্য চাই। কনগ্রেস অবশ্য এতে পিছপাও হবে না। কেননা, কনগ্রেসের পাণ্ডারা ঐ এক ইংরেজিভাষাই জানেন, এবং ঐ এক ইংরেজিভাষাই মানেন। তবে তাদের কথা বোঝে, এমন লোক দেশে ক’টি। অতএব তঁরা যদি দেশকে রাজনৈতিক-শিক্ষা দিতে বসেন তো। ফলে দাড়াবে এই যে, কনগ্রেসওয়ালারাই পালা করে পরস্পর-পরস্পরের গুরুশিষ্য হবেন। সুতরাং যতদিন-না ভারতবর্ষের ত্ৰিশ কোটি লোক ইংরেজি-শিক্ষিত হয়ে ওঠে, ততদিন এই রাজনৈতিক-শিক্ষার কার্যটা মুলতবি রাখাই কর্তব্য। সে শিক্ষা যে শুধু নিস্ফল হবে তাই নয়, তার কুফলও হতে পারে। শিক্ষা দিতে গিয়ে হয়তো কনগ্রেসকে দুদিন পরে দেশের লোককে বলতে হবে- "উলটা বুঝিলি রাম'। এ বিপদ যে আছে, তার প্রমাণও আছে। আর এরূপ উলটা বোঝাটা রামের পক্ষে আরামের নয়। এবং সে অবস্থায় কনগ্রেসের পক্ষে তাকে ভ্যাবাগঙ্গারাম বলাটাও ज९१ॉड् व् ॥ দ্বিতীয়ত, জাতীয় রাজনৈতিক শিক্ষার জন্য একটা জাতীয় রাজনৈতিক আদর্শ থাকা আবশ্যক। একটা আইডিয়ােল যে থাকা চাইই চাই, এ কথা কনগ্রেসও মুক্তকণ্ঠে স্বীকার করে। এ স্থলে যদি কেউ প্রশ্ন করেন যে, কনগ্রেস কি আজও তেমন-কোনো রাজনৈতিক আদর্শের সন্ধান পেয়েছেন ? তা হলে কনগ্রেসওয়ালাৱা উচ্চকণ্ঠে উত্তর দেবেন, অবশ্য পেয়েছি। এবং সে আদর্শের নাম হচ্ছে, ‘সাম্রাজ্যের ভিতর J’ | নিত্য দেখতে পাই যে, এক দলের মতে ভারতবর্ষে স্বরাজকতার অর্থ হচ্ছে অরাজকতা, আর-এক দলের মতে অরাজকতার অর্থই হচ্ছে স্বরাজকতা। এই দুটি হচ্ছে আমাদের রাজনৈতিক-গগনের শুক্ল আর কৃষ্ণ পক্ষ । কনগ্রেস অবশ্য এই দুই