পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

Σ 3ν বীরবলের হালখাতা মানুষের ভিতরে-বাইরে জড়ের ও প্ৰাণের অহৰ্নিশি যে দ্বন্দ্ব চলছে, সে দ্বন্দ্বের তিলমাত্র বিরাম নেই, ক্ষণমাত্র বিচ্ছেদ নেই। এ যুদ্ধের শেষফল কী দাঁড়াবে, বিশ্বের শেষকথা মৃত্যু কি অমৃতত্ব, সে কথা র্যার বিশ্ব তিনিই জানেন- তুমিও জানিনা, আমিও জানি নে । তবে প্ৰাণের কথা হচ্ছে এই যে, যতক্ষণ শ্বাস ততক্ষণ আশ । আর তার হতাশ হয়ে মাঝপথে শুয়ে পড়বার আজও কোনো কারণ ঘটে নি। কেননা, ক্ষীণ। নবীন তৃণান্ধুর আজও পৃথিবীর প্রাচীন কঠিন বুক ফুড়ে সবুজ হয়ে উঠছে। প্ৰাণের শক্তি এতই অদম্য যে, এক দেশে তাকে মাটি-চাপা দিলে আর-এক দেশে তা ঠেলে ওঠে, এক যুগে তাকে নিবিয়ে দিলে আর-এক যুগে তা জ্বলে ওঠে। মনোজগতের এই জীবন-মরণের লড়াইয়ের লিপিবদ্ধ ইতিহাসের নামই সাহিত্য । এ ক্ষেত্রে কে কোন দিক নেবেন, তা তার কোন পক্ষের উপর আস্থা বেশি- তার উপর নির্ভর করে। আমি পূর্বেই বলেছি যে, বাঁচবার আবশ্যকতা কী, এবং বাঁচবার সার্থকতা কোথায়তা কেউ বলতে পারেন না। তবে যারা প্ৰাণ আছে, তার পক্ষে সেই প্ৰাণ রক্ষা কৱবার প্ৰবৃত্তি এতই স্বাভাবিক যে, হাজারে নশো-নিরানব্বইটি প্ৰাণী বিনা কারণে প্ৰাণপণে প্ৰাণধারণ করতে চায়। প্ৰাণীমাত্রেরই প্ৰাণের প্রতি এই অহেতুকী গ্ৰীতিই তার স্থায়িত্বের কারণ। যার এককালে প্ৰাণ ছিল, তা যে একালে মরেও মরে না- তার পরিচয় লাভ করবার জন্য আমাদের দেশান্তরে যেতে হয় না। সুতরাং সবুজ পত্র যে জীবনের মেয়াদ বাড়িয়ে নিতে স্থির সংকল্প হয়েছে, তার জন্য কোনো প্ৰাণীর নিকট আপনার কোনোরূপ জবাবদিহি নেই। বেঁচে থাকবার স্বপক্ষে কোনোরূপ যুক্তি না থাকলেও, তার পিছনে প্ৰকৃতি আছে। কিন্তু বাঁচাবার পক্ষে যুক্তিও নেই, প্ৰকৃতিও নেই। আমরা যাকে বলি প্ৰাণধারণ করা, বৈজ্ঞানিকেরা তাকে বলেন, জীবনসংগ্ৰাম । তঁাদের মতে প্ৰাণের প্রশান শত্রু প্ৰাণী । একের পক্ষে বাঁচতে হলে অপরকে মারা দরকার। সুতরাং অপরকে বঁচিয়ে নিজে বঁচবার চেষ্টাটি পাগলামি মাত্র। আপনি যদি এ মতে বিশ্বাস করেন, তা হলে আপনি কোনো জিনিসকে বঁচিয়ে তোলবার কথা মুখে আনবেন না, নইলে সবুজ পত্রের কপালে অকালমৃত্যু এবং অপমৃত্যু একই সঙ্গে দুইই ঘটতে পারে। ইহলোক যে একটা যুদ্ধক্ষেত্র, এ কথা আমিও মানি ; কিন্তু আমার মতে প্ৰাণের সঙ্গে প্ৰাণের কোনো ঝগড়া নেই। সংগ্রামটা হচ্ছে আসলে জীবনের সঙ্গে মরণের । সুতরাং নির্বিবাদে বেঁচে থাকবার একমাত্র উপায় হচ্ছে ও দুয়ের মধ্যে একটা আপলে