St R বীরবিলের হালখাতা দক্ষিণে পূর্বে পশ্চিমে, যেখানেই কোদাল মারা যাবে সেখানেই, লুপ্তসভ্যতার গুপ্তধন বেরিয়ে পড়বে। আর সে ধনে আমরা এমনি ধনী হয়ে উঠব যে, মনোজগতে খোরপোশের জন্য আমাদের আর চাষ-আবাদ করতে হবে না । এই খোড়াখুঁড়ির ফলে সোনা না হোক তামা বেরিয়েছে, হীরে না হোক পাথর বেরিয়েছে। কিন্তু এ যে-সে তাম যে-সে। পাথর নয়- সব হরফ-কাটা । এই-সব মুদ্রাঙ্কিত তাম্রফলকের বিশেষ-কিছু মূল্য নেই, তা পয়সারই মতো সস্তা। এ কালেও আমরা শিল কুটি, কিন্তু সেই কোটা-শিল পড়া যায় না ; কেননা, তার অক্ষর সব রেখাক্ষর। কিন্তু অতীতের এই ক্ষোদিত পাবণের কথা স্বতন্ত্র। বিদ্যা বলেছিলেন 'শিলা জলে ভেসে যায়, বানরে সংগীত গায়, দেখিলেও না হয়। প্ৰত্যয়” কিন্তু আজকাল যদি কেউ বলেন যে ‘কপি জলে ভেসে যায়, পাষাণে সংগীত গায়, দেখিলেও না হয়। প্ৰত্যয়” তা হলে তিনি অবিদ্যারই পরিচয় দেবেন। কেননা, আজকাল পাষাণের সংগীতে দেশ মাতিয়ে তুলেছে। অতীত আজ তার পাষাণ-বন্দনে তার স্বরে আত্মপরিচয় দিচ্ছে। কাগজের কথায় আমরা আর কান দিই নে। রামায়ণ-মহাভারত এখন উপন্যাস হয়ে পড়েছে, এবং ইতিহাস এখন বুদ্ধের শরণ গ্ৰহণ করেছে। তার কারণ আমরা মাটি খুঁড়ে আবিষ্কার করেছি যে, যাকে আমরা হিন্দুসভ্যতা বলি সেটি একটি অর্বাচীন পদাৰ্থ- বৌদ্ধসভ্যতার পাকা বুনিয়াদের উপরেই তা প্ৰতিষ্ঠিত। ভারতবর্ষের ইতিহাসের সর্বনিম্নস্তরে যা পাওয়া যায়, সে হচ্ছে বৌদ্ধধর্ম। ফলে, আমরা হিন্দু হলেও বৌদ্ধধর্ম নিয়েই গৌরব করছিলুম। তাই প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, পাটলিপুত্ৰই হচ্ছে আমাদের ইতিহাসের কেন্দ্ৰস্থল- একাধায়ে জন্মভূমি এবং পীঠস্থান । V কথাসরিৎসাগরের প্রসাদে পাটলিপুত্রের জন্মকথা আমরা সকলেই জানতুম। এবং আমরা, কাব্যরসের রসিকেরা, সেই জন্মবৃত্তান্তই সাদরে গ্ৰাহ করে নিয়েছিলুম ; কেননা, সে কথায় বস্তুতন্ত্রতা না থাকলেও রস আছে, তাও আবার একটি নয়, তিনতিনটি- মধুর বীর এবং অদ্ভুত রস। পুত্ৰকর্তৃকপাটলিহরণের বৃত্তান্ত, কৃষ্ণকর্তৃক রুক্মিণীহরণ এবং অজুনকর্তৃক সুভদ্রাহরণের চাইতেও অত্যাশ্চৰ্য ব্যাপার। কৃষ্ণ প্রভৃতি রথে চড়ে স্থলপথে পলায়ন করেছিলেন, কিন্তু পুত্ৰ পাটলিকে ক্রোড়স্থ করে