প্রত্নতত্ত্বের পারশ্য-উপন্যাস 9 R \9 মায়া-পাদুকায় ভর দিয়ে নভোমার্গে উডউীন হয়েছিলেন। কৃষ্ণাজুন স্ব স্ব নগরীতে প্ৰস্থান করেছিলেন ; পুত্র কিন্তু তার মায়া-যষ্টির সাহায্যে যে-পুৱী আকাশে নির্মাণ করেছিলেন সেই পুরী ভূমিষ্ঠ হয়ে পাটলিপুত্র নাম ধারণ করে। বৈজ্ঞানিকেরা কিন্তু জাদুতে বিশ্বাস করেন না । সুতরাং বৈজ্ঞানিক মতে পাটলিপুত্রকে খনন করা অবশ্যকর্তব্য হয়ে পড়েছিল এবং সে কর্তব্যও সম্প্রতি কাৰ্যে পরিণত করা হয়েছে। খেড়া জিনিসটের ভিতর একটি বিপদ আছে, কেননা, কোনো-কোনো স্থলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরোয় । এ ক্ষেত্রে হয়েছেও তাই । ডক্টর স্পনার নামক জনৈক প্রত্নতত্ত্বের কর্ত-ব্যক্তি এই ভূমধ্য-রাজধানী খনন করে আবিষ্কার করেছেন যে, এ দেশের মাটি খুঁড়লে দেখা যায় যে তার নীচে ভারতবর্ষ নেই, আছে শুধু পারশ্য। Palimpsest-নামক একপ্রকার প্রাচীন পুথি পাওয়া যায়, যার উপরে এক ভাষায় লেখা থাকে। আর নীচে আর-এক ভাষায় । বলা বাহুল্য, উপরে যা লেখা থাকে তা জাল, আর নীচে যা লেখা থাকে তাই আসল। ডক্টর স্প'নারের দিব্যদৃষ্টিতে এতকাল পরে ধরা পড়েছে যে, আমরা যাকে ভারতবর্ষের ইতিহাস বলি, সে হচ্ছে একটি বিরাট Palimpsest ; তার উপরে পালি কিংবা সংস্কৃত ভাষায় যা লেখা আছে তা জাল, আর তার নীচে যা লেখা আছে তাই আসল। সে লেখা অবশ্য ফারসি ; কেননা আমরা কেউ তা পড়তে পারি নে। ডক্টর স্পনোরের কথা বৈজ্ঞানিকেরা মেনে না নিন, মান্য করতে বাধ্য ; কেননা, সেকালের কাব্যের জাদুঘর হেসে উড়িয়ে দেওয়া যায়, কিন্তু একালের জাদুঘরের কাব্যকে তা করা চলে না । ডক্টর স্পনার তীর নব-মত প্ৰতিষ্ঠা করবার জন্য নানা প্ৰমাণ, নানা অনুমান, নানা দর্শন, নানা নিদর্শন সংগ্রহ করেছেন। এ সকলের মূল্য যে কী, তা নির্ণয় করা আমার সাধ্যের অতীত। এই পৰ্যন্ত বলতে পারি যে, তিনি এমন-একটি যুক্তিবাদ দিয়েছেন, যার আর কোনো খণ্ডন নেই। স্পনার সাহেবের মতে যার নাম অস্তুর তারই নাম দানব, এবং যার নাম দানব তারই নাম শক, এবং যার নাম শক তারই নাম পাশি । এ কথা যদি সত্য হয় তা হলে স্বীকার করতেই হবে যে, এ দেশের মাটি খুড়লে পার্শি শহর বেরিয়ে পড়তে বাধ্য। দানবপুৱী যে পাতালে অর্থাৎ মাটির নীচে অবস্থিত এ কথা তো হিন্দুর সর্বশাস্ত্রসম্মত । A অতএব দাঁড়াল এই যে, আমাদের ভবিষ্যৎও নেই অতীতও নেই। এক বাকি থাকল বর্তমান । সুতরাং বঙ্গসাহিত্যকে এখন থেকে এই বর্তমান নিয়েই কারবার করতে হবে।
পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫১
অবয়ব