টীকা ও টিল্পনি শ্ৰীযুক্ত রামেন্দ্রসুন্দর ত্ৰিবেদী মহাশয় সম্প্রতি দুঃখ করে বলেছেন যে, সেকালে সবে তিনচারখানি মাসিকপত্র ছিল এবং তার একথানিও মাসে-মাসে বেরত না ; থেকে-থেকেই তার একটি-না-একটি বিনা-নোটিশে বন্ধ হয়ে যেত। এ দুঃখ আমাদের নেই। একালে অন্তত এমন ত্রিশ-চল্লিশখানি মাসিকপত্ৰ আছে যা মাসে-মাসে বেরয়, আর তার একখানিও বন্ধ হয়ে যায় না। " atter GT's frive crisis', frtsfits (at "The more the merrier' সুতরাং পূর্ব-পশ্চিম যেদিক থেকেই দেখ, মাসিকপত্রের এ আধিক্যে আমাদের খুশি হবারই কথা । তবে মাসিকপত্রের অতিবাড়-বাড়াটা সাহিত্যের পক্ষে কল্যাণকর কি অকল্যাণকর, সে বিষয়ে সকলে একমত নন। স্বনামধন্য ইংরেজ লেখক অস্কার ওআইন্ডের মতে সাহিত্য এবং সাময়িক-সাহিত্য, এ দুয়ের ভিতর একটা স্পষ্ট প্ৰভেদ আছে। তিনি r(a, Literature is not read SAKR Journalism is unreadable পূর্বোক্ত বচনের প্রথমাংশ যে অনেক পরিমাণে সত্য, সে কথা আমরা সকলেই স্বীকার করতে বাধ্য। চণ্ডীদাস থেকে শুরু করে রবীন্দ্ৰনাথ পৰ্যন্ত যে-সকল লেখক নিয়ে আমরা মহা গৌরব করি, তাদের রচিত কাব্যের সঙ্গে সাক্ষাৎসম্বন্ধে যার পরিচয় আছে- এমন সাহিত্যিক শতেকে জনেক মেলে কি না, সে বিষয়ে আমার বিশেষ সন্দেহ আছে। ‘লাখে না মিলল। এক”- এ দুঃখের কথা, আমার বিশ্বাস, বিদ্যাপতিঠাকুর ভবিষ্যৎপাঠকসমাজের প্রতি লক্ষ করেই বলেছেন। তার পর রবীন্দ্ৰনাথের লেখার সঙ্গে সকল সমালোচকের যে পরিচয় নেই, এর প্রমাণ আমি সম্প্রতি পেয়েছি! বঙ্গসরস্বতীর জনৈক ধনাঢ্য পৃষ্ঠপোষক সম্প্রতি কলিকাতার সাহিত্যসভায় এই মত বাক্ত করেছেন যে, রবীন্দ্রনাথ তার ভাষার দৈন্য এবং ভাবের দৈন্য গোপন করবার জন্যই মৌখিকভাষার আশ্ৰয় অবলম্বন করেছেন । এ কথা বলাও যা, আর দুয়ে-দুয়ে পাচ করবার অক্ষমতা বশতই শ্ৰীযুক্ত পরাঞ্জপে দুয়ে-দুয়ে চার করেন— এ কথা বলাও তাই। সরস্বতীর পৃষ্ঠপোষক হবার জন্য অবশ্য কারো তার মুখদর্শন করবার কোনো দরকার নেই। তবে উক্ত সভাম্ব সমবেত বিদ্বন্মণ্ডলী যে পূর্বোক্ত অত্যুক্তির কোনাে প্রতিবাদ, করেন নি, তার থেকে অনুমান করা অসংগত হবে না যে, রবীন্দ্রনাথের কাব্যের সঙ্গে সাহিত্যিক সভ্যদের কারো বিশেষ পরিচয় নেই। না-পড়ে-পণ্ডিত হওয়ায় বাঙালি তো তার অসাধারণ বুদ্ধিরই পরিচয় দেয়!
পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫৩
অবয়ব