পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৫৭

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

শিশু-সাহিত্য যে-কোনো ভাষাতেই হোক-না কেন, সমাস-ব্যবহারের ভিতর যে বিপদ আছে, সে বিষয়ে শ্ৰীযুক্ত শতীশচন্দ্ৰ ঘটক আমাদের সতর্ক করে দিয়েছেন। আমরা যদি কথাৱ গায়ে কথা জড়িয়ে লিখি, তা হলে পাঠকদের পক্ষে তা ছাড়িয়ে নিয়ে পড়া কঠিন : অষ্টা পুত্ৰ বৃত্ৰকে আশীৰ্বাদ করেছিলেন 'ইন্দ্রশত্রু হও”। কিন্তু সমাসের কৃপায় সে বর যে কী মারাত্মক শাপে পরিণত হয়েছিল, তার আমূল বিবরণ "শতপথ ব্রাহ্মণে দেখতে পাবেন। সুতরাং পাঠক যাতে উলটো না বোঝেন, সে কারণ এ প্ৰবন্ধের সমস্ত-নামটির অর্থ প্ৰথমেই বলে রাখা আবশ্যক। এ প্ৰবন্ধে ব্যবহৃত শিশু-সাহিত্যের অর্থ বঙ্গসাহিত্য নয়। শিশুদের জন্য বাংলাভাষায় যে সাহিত্যের আজকাল নিত্যনব সৃষ্টি করা হচ্ছে সেই সাহিত্যই আমার বিচাৰ্য। শিশু-সাহিত্য বলে কোনো জিনিস আছে কি না, যা বিশেষ করে শিশুদের জন্যই লেখা হয় তাকে সাহিত্য বলা চলে কি না, এ বিষয়ে অনেকের মনে বিশেষ সন্দেহ আছে ; আমার মনে কিন্তু নেই। আমার দৃঢ় বিশ্বাস যে, শিশু-সাহিত্য বলে কোনো পদার্থের অস্তিত্ব নেই এবং থাকতে পারে না। কেননা, শিশু-পছন্দ সাহিত্য শিশু ব্যতীত অপর-কেউ রচনা করতে পারে না, আর শিশুরা সমাজের উপর আৱ যে অত্যাচারই করুক-না কেন, সাহিত্যরচনা করে না । বিলেতে চিলড্রেনের সাহিত্য থাকতে পারে, এ দেশে নেই; কেননা, সে দেশের চাইন্ডের সঙ্গে এ দেশের শিশুর ঢের তফাত- বয়েসে। এ দেশে আর-কিছু বাড়ুক আর না-বাডুক, বয়েস বাড়ে ; আর সে এত তেড়ে যে, আমাদের ছেলেমেয়ের যত সত্বর শৈশব অতিক্রম করে, পৃথিবীর অপর-কোনো দেশে তত শীঘ্ৰ করে না। অন্তত এই হচ্ছে আমাদের ধারণা। ফলে, যে বয়েসে ইউরোপের মেয়ের ছেলেখেলা করে, সেই বয়েসে আমাদের মেয়েরা ছেলে মানুষ করে। এবং সেই ছেলে যাতে শীঘ্ৰ মানুষ হয়, সেই উদ্দেশ্যে আমরা শৈশবের মেয়াদ পাঁচ বৎসরের বেশি দিই নে। আজকাল আবার দেখতে পাই, অনেকে তার মধ্যেও দু বছর কেটে নেবার পক্ষপাতী। শৈশবটা হচ্ছে মানবজীবনের পতিত জমি ; এবং আমাদের বিশ্বাস, সেই পতিত জমি যত শীঘ্ৰ আবাদ করা যাবে, তাতে তত বেশি সোনা ফলবে । বাপ-মা'র এই সুবর্ণের লোভাবশত এ দেশের ছেলেদের বর্ণপরিচয়টা অতিশৈশব্লেই হয়ে থাকে। একালের শিক্ষিত লোকেরা ছেলে হাঁটতে শিখলেই তাকে পড়তে বসান। শিশুদের উপর এরূপ অত্যাচার করাটা যে ভবিষ্যৎ বাঙালিজাতির পক্ষে