পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৬৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

বীরবলের হালখাতা واو আকাশের নৃত্য অর্থাৎ সর্বাঙ্গের স্বচ্ছন্দ: কম্পন থেকে যে আলোকের, এবং বাতাসের উক্তরূপ কম্পন থেকে যে ধ্বনির উৎপত্তি হয়েছে- তা বৈজ্ঞানিকেরা হাতে-কলমে প্ৰমাণ করে দিতে পারেন। কিন্তু আট বলে, আত্মার কম্পন থেকে সুরের উৎপত্তি, সুতরাং জড়প্ৰকৃতির গর্ভে তা জন্মলাভ করে নি। আত্মা কঁপে আনন্দে, সৃষ্টির চরম আনন্দে ; আর আকাশ-বাতাস কঁপে বেদনায়, সৃষ্টির প্রসববেদনায়। সুতরাং আর্টিস্টদের মতে সুর শব্দের অনুবাদ নয়, প্ৰতিবাদ । যেখানে আর্টে ও বিজ্ঞানে মতভেদ হয়, সেখানে আপস-মীমাংসার জন্য দর্শনকে সালিশ মানা ছাড়া আর উপায় নেই। দার্শনিকেরা বলেন, শব্দ হতে সুরের কিংবা সুর হতে শব্দের উৎপত্তি- সে বিচার করা সময়ের অপব্যয় করা । এ স্থলে আসল জিজ্ঞাস্য হচ্ছে, রাগ ভেঙে সুরের, না সুর জুড়ে রাগের সৃষ্টি হয়েছেএক কথায়, সুর আগে না রাগ আগে । অবশ্য রাগের বাইরে সাগমের কোনো অস্তিত্ব নেই, এবং সার্গমের বাইরে রাগের কোনো অস্তিত্ব নেই। সুতরাং সুর পূর্বরাগী কি অনুরাগী, এই হচ্ছে আসল সমস্যা। দার্শনিকের বলেন যে, এ প্রশ্নের উত্তর তারাই দিতে পারেন যারা বলতে পারেন বীজ আগে কি বৃক্ষ আগে ; অর্থাৎ কেউ পারেন না। আমার নিজের বিশ্বাস এই যে, উক্ত দার্শনিক সিদ্ধান্তের আর-কোনো খণ্ডন নেই। তবে বৃক্ষায়ুৰ্বেদীরা নিশ্চয়ই বলবেন যে, বৃক্ষ আগে কি বীজ আগে, সে রহস্যের ভেদ তারা বাৎলাতে পারেন। কিন্তু তাতে কিছু আসে-যায় না। কেননা, ও কথা শোনাবামাত্র আর-এক দলের বৈজ্ঞানিক, অর্থাৎ পরমাণুবাদীরা, জবাব দেবেন যে সংগীত আয়ুর্বেদের নয় বায়ুৰ্বেদের অন্তর্ভূত; অর্থাৎ বিজ্ঞানের বিষে বিষক্ষয় হয়ে যাবে। আসল কথা এই যে, আমি কর্তা তুমি ভোক্তা এ জ্ঞান যার নেই, তিনি আর্টিস্ট নন। সুতরাং সংগীত সম্বন্ধে প্ৰকৃতিকে সম্বোধন ক’রে- তুমি কর্তা আমি ভোক্তা- এ কথা কোনো আর্টিস্ট কখনো বলতে পারবেন না, এবং ও কথা মুখে আনবার কোনো দরকারও নেই। প্ৰকৃতির হাতে-গড়া এই বিশ্বসংসার যে আগাগোড়া বেনুরো, তার অকাট্য প্ৰমাণ- আমরা পৃথিবীসুদ্ধ লোক পৃথিবী ছেড়ে সুরলোকে যাবার জন্য লালায়িত। অতএব দাড়াল এই যে, সংগীতের উৎপত্তির আলোচনায় তার লয়ের সম্ভাবনাই বেড়ে যায়। তাই সহজ মানুষে চায় তার স্থিতি, ভিত্তি নয় । 8 অতঃপর দেশী বিলেতি সংগীতের ভেদাভেদ নির্ণয় করার চেষ্টা করা যাক - এ দুয়ের মধ্যে আর যা প্ৰভেদই থাক, তা অবশ্য ক-খ-গত নয়। যে বারো সুর