পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৬৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপের কথা SS. এবং আমাদের সকলেরই চোখ আছে; সম্ভবত শুধু তঁদের ছাড়া, যারা সৌন্দর্যের নাম করলেই অতীন্দ্ৰিয়তার ব্যাখ্যান অর্থাৎ উপাখ্যান শুরু করেন। কিন্তু আমি এই রূপ-জিনিসটিকে অতিবর্জিত ইন্দ্ৰিয়ের কোঠাতেই টিকিয়ে রাখতে চাই ; কেননা, অতীন্দ্ৰিয়-জগতে রূপ নিশ্চয়ই অরূপ হয়ে যায়। 8 রূপের বিষয় দার্শনিকেরা কী বলেন আর না-বলেন, তাতে কিছু যায়-আসে না ; কেননা, যা দৃষ্টির অগোচর, তাই দর্শনের বিষয়। অতএব এ কথা নিৰ্ভয়ে বলা যেতে পারে যে, বস্তুর রূপ বলে যে একটি গুণ আছে, তা মানুষমাত্রেই জানে এবং মানে। তবে সেই গুণের পক্ষপাতী হওয়াটা গুণের কি দোষের- এই নিয়েই যা৷ মতভেদ । রূপকে আমরা ভক্তি করি নে, সম্ভবত ভালোও বাসি নে। আপনার সকলেই জানেন যে, হালে একটা মতের বহুলপ্রচার হয়েছে, যার ভিতরকার কথা এই যে, জাতীয় আত্মমৰ্যাদা হচ্ছে পরীশ্ৰীকান্তৱতারই সদর পিঠ । সম্ভবত এ কথা সত্য, কিন্তু তাই বলে শ্ৰীকাতরতা ও যে ঐ জাতীয় আত্মমৰ্যাদার লক্ষণ- এ কথা স্বীকার করা যায় না ; কেননা, বিশ্বমানবের সভ্যতার ইতিহাস এর বিরুদ্ধে চিরদিন সাক্ষি দিয়ে আসছে। স্বদেশের ভিতর থেকে বেরিয়ে গেলেই অপর সভ্যজাতির কাছে রূপের মর্যাদা যে কত বেশি, তার প্রমাণ হাতে-হাতে পাওয়া যাবে। বর্তমান ইউরোপ সুন্দরকে সত্যের চাইতে নীচে আসন দেয় না, সে দেশে জ্ঞানীর চাইতে আর্টিস্টের মান্য কম নয়। তারা সভ্যসমাজের দেহটাকে- অর্থাৎ দেশের রাস্তাঘাট বাড়িঘরদের মন্দিরপ্রাসাদ, মানুষের আসনবসন সাজসরঞ্জাম ইত্যাদি— নিত্য নূতন করে সুন্দর করে গড়ে তোেলবার চেষ্টা করছে ৭ সে চেষ্টার ফল সু কি কু হচ্ছে, সে স্বতন্ত্র কথা। ইউরোপীয় সভ্যতার ভিতর অবশ্য একটা কুৎসিত দিক আছে, যার নাম কমার্শিয়ালিজম; কিন্তু এই দিকটি কদৰ্য বলেই তার সর্বনাশের দিক। কমার্শিয়ালিজম এর মূলে আছে লোভ। আর লোভে পাপ পাপে মৃত্যু । আপনার সকলেই জানেন যে, রূপের সঙ্গে মোহের সম্পর্ক থাকতে পারে, কিন্তু লোভের নেই। ইউরোপ ছেড়ে এশিয়াতে এলে দেখতে পাই যে, চীন ও জাপান রূপের এতই ভক্ত যে, রূপের আরাধনাই সে দেশের প্রকৃত ধর্ম বললেও অত্যুক্তি হয় না। রূপের প্রতি এই পরাস্ত্রীতিবশত চীন,জাপানের লোকের হাতে-গড়া এমন জিনিস নেই যার রূপ নেই- তা সে ঘটিই হোক আর বাটিই হোক। র্যারা তাদের হাতের কাজ দেখেছেন, তঁরাই তাদের রূপ-সৃষ্টির কৌশল দেখে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছেন। মোঙ্গলজাতিকে