পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৭০

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

S AR বীরবলের হালখাতা ভগবান রূপ দেন নি, সম্ভবত সেই কারণে সুন্দরকে তাদের নিজের হাতে গড়ে নিতে হয়েছে। এই তো গেল বিদেশের কথা । 6. আবার শুধু স্বদেশের নয়, স্বকালের ভিতর থেকে বেরিয়ে গেলে আমরা ঐ একই সত্যের পরিচয় পাই। প্ৰাচীন গ্ৰীকো-ইতালীয় সভ্যতার ঐকান্তিক রূপচর্চার ইতিহাস তো জগদবিখ্যাত। প্ৰাচীন ভারতবর্ষও রূপ সম্বন্ধে অন্ধ ছিল না ; কেননা, আমরা যাই বলি-নে কেন, সে সভ্যতাও মানবসভ্যতা- একটা সৃষ্টিছাড়া পদার্থ নয়। সে সভ্যতারও শুধু আত্মা নয়, দেহ ছিল ; এবং সে দেহকে আমাদের পূর্বপুরুষেরা সুঠাম ও সুন্দর করেই গড়তে চেষ্টা করেছিলেন। সে দেহ আমাদের চোখের সুমুখে নেই বলেই আমরা মনে করি যে, সেকালে যা ছিল তা হচ্ছে শুধু অশরীরী আত্মা। কিন্তু সংস্কৃতসাহিত্য থেকেই প্ৰমাণ পাওয়া যায় যে, তাদের কতটা সৌন্দৰ্যজ্ঞান ছিল। আমরা যাকে সংস্কৃতকাব্য বলি, তাতে রূপবর্ণনা ছাড়া আর বড়ো কিছু নেই; আর সে রূপবর্ণনাও আসলে দেহের, বিশেষত রমণী-দেহের, বর্ণনা ; কেননা, সে কাব্যসাহিত্যে যে প্ৰকৃতিবর্ণনা আছে তাও বস্তুত রমণীর রূপবর্ণনা । প্ৰকৃতিকে তঁরা সুন্দরী রমণী হিসেবেই দেখেছিলেন । তার যে অংশ নারী অঙ্গের উপমেয় কি উপমান নয়, তার স্বরূপ হয় তঁদের চোখে পড়ে নি, নয় তা তঁরা রূপ বলে গ্ৰাহ করেন নি। সংস্কৃতসাহিত্যে হরেকরকমের ছবি আছে, কিন্তু ল্যাণ্ডসকেপ নেই বললেই হয় ; অর্থাৎ মানুষের সঙ্গে নিঃসম্পর্ক প্ৰকৃতির অস্তিত্বের বিষয় তারা সম্পূর্ণ উদাসীন ছিলেন। ল্যাণ্ডসকেপ প্ৰাচীন গ্রীস কিংবা রোমের হাত থেকেও বেরীয় নি। তার কারণ, সেকালে মানুষে মানুষ বাদ দিয়ে বিশ্বসংসার দেখতে শেখে নি। এর প্রমাণ শুধু আর্টে নয়, দর্শনে-বিজ্ঞানেও পাওয়া যায়। আমরা আমাদের নববিজ্ঞানের প্রসাদে মানুষকে এ বিশ্বের পরমাণুতে পরিণত করেছি, সম্ভবত সেই কারণে আমরা মানবদেহের সৌন্দৰ্য অবজ্ঞা করতে শিখেছি। আমাদের পূর্বপুরুষেরা কিন্তু সে সৌন্দৰ্যকে একটি অমূল্য বস্তু বলে মনে করতেন ; শুধু স্ত্রীলোকের নয়, পুরুষের রূপের উপরও তাদের ভক্তি ছিল। যার আলোকসামান্য রূপ নেই, তঁাকে এ দেশে পুৱাকালে মহাপুরুষ বলে কেউ মেনে নেয় নি। শ্ৰীরামচন্দ্র বুদ্ধদেব শ্ৰীকৃষ্ণ প্রভৃতি অবতারেরা সকলেই সৌন্দর্যের অবতার ছিলেন। রূপগুণের সন্ধিবিচ্ছেদ করা সেকালের শিক্ষার একটা প্ৰধান অঙ্গ ছিল না। শুধু তাই নয়, আমাদের পূর্বপুরুষদের কদাকারের উপর এতটাই ঘূণা ছিল যে, পুৱাকালের শূদ্রেরা যে দাসত্ব