রূপের কথা y Vo a হতে মুক্তি পায় নি, তার একটি প্রধান কারণ তারা ছিল কৃষ্ণবর্ণ এবং কুৎসিতঅন্তত আৰ্যদের চোখে । সেকালের দর্শনের ভিতর অরূপের জ্ঞানের কথা থাকলেও সেকালের ধর্ম রূপজ্ঞানের উপরেই প্ৰতিষ্ঠিত। পরব্রহ্ম নিরাকার হলেও ভগবান, মন্দিরে মন্দিরে মূর্তিমান। প্ৰাচীন মতে নিগুৰ্ণ-ব্ৰহ্ম অরূপ এবং সগুণ-ব্ৰহ্ম । সরূপ । N সভ্যতার সঙ্গে সৌন্দর্যের এই ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ থাকবার কারণ, সভ্যসমাজ বলতে বোঝায় গঠিত-সমাজ। যে সমাজের গড়ন নেই, তাকে আমরা সভ্যসমাজ বলি নে । একালের ভাষায় বলতে হলে সমাজ হচ্ছে একটি অর্গানিজম; আর আপনারা সকলেই জানেন যে সকল অর্গ্যানিজম একজাতীয় নয়, ও-বস্তুর ভিতর উঁচুনিচুর প্রভেদ বিস্তর। অর্গ্যানিক-জগতে প্রোটোপ্লাজম হচ্ছে সবচাইতে নীচে এবং মানুষ সবচাইতে উপরে। এবং মানুষের সঙ্গে প্রোটোপ্ল্যাজম এর প্রত্যক্ষ পার্থক্য হচ্ছে রূপে ; অপর-কোনো প্ৰভেদ আছে কি না, সে হচ্ছে তর্কের বিষয়। মানুষে যে প্রোটোপ্লাজম এর চাইতে রূপবান, এ বিষয়ে, আশা করি, কোনো মতভেদ নেই। এই থেকে প্ৰমাণ হয় যে, যে সমাজের চেহারা যত সুন্দর, সে সমাজ তত সভ্য। এরূপ হামার একটি স্পষ্ট কারণও আছে। এ জগতে রূপ হচ্ছে শক্তির চরম বিকাশ ; সমাজ গড়বার জন্য মানুষের শক্তি চাই এবং সুন্দর করে গড়বার জন্য তার চাইতেও বেশি শক্তি চাই। সুতরাং মানুষ যেমন বাড়বার মুখে ক্ৰমে অধিক সুশ্ৰী হয়ে ওঠে এবং মরবার মুখে ক্ৰমে অধিক কুশ্ৰী হয়— জাতের পক্ষেও সেই একই নিয়ম খাটে। কদৰ্যতা দুর্বলতার বাহা লক্ষণ, সৌন্দর্য শক্তির। এই ভারতবর্ষের অতীতের দিকে দৃষ্টিপাত করলেই দেখা যায় যে, যখনই দেশে নবশক্তির আবির্ভাব হয়েছে তখনই মঠে-মন্দিরেবেশে-ভূষায় মানুষের আশায়-ভাষায় নব্বসৌন্দৰ্য ফুটে উঠেছে। ভারতবর্ষের আর্টের বৌদ্ধযুগ ও বৈষ্ণবযুগ এই সত্যেরই জাজ্বল্যমান প্ৰমাণ। আমাদের এই কোণঠাসা দেশে যেদিন চৈতন্যদেবের আবির্ভাব হয়, সেইদিনই বাঙালি সৌন্দর্যের আবিষ্কার করে। এর পরিচয় বৈষ্ণবসাহিত্যে পাওয়া যায়। কিন্তু সে সৌন্দর্যবৃদ্ধি যে টিকল না, বাংলার ঘরে বাইরে যে তা নানা রূপে নানা আকারে ফুটল না— তার কারণ চৈতন্যদেব যা দান করতে এসেছিলেন তা বোলো-আনা গ্ৰহণ করবার শক্তি আমাদের ছিল না। যে কারণে বাংলার বৈষ্ণবধর্ম বাঙালি সমাজকে একাকার করবার চেষ্টায় বিফল হয়েছে, হয়তো সেই একই কারণে তা বাঙালিসভ্যতাকে সাকার,
পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৭১
অবয়ব