পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/১৭৩

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

রূপের কথা S) ግ¢ প্রভেদও বিস্তর। জ্ঞানের আলো সাদা ও একঘেয়ে, অর্থাৎ ও হচ্ছে আলোর মূল ; অপর পক্ষে, রূপের আলো রঙিন ও বিচিত্র, অর্থাৎ আলোর ফুল। আদিম মানবের কাছে ফুলের কোনো আদর নেই, কেননা, ও-বস্তু আমাদের কোনো আদিম ক্ষুধার নিবৃত্তি করে না; ফুল আর-যাই হোক, চৰ্য্য-চোষ্য কিংবা লোহা-পেয় নয়। এ-সব কথা শুনে আমার বৈজ্ঞানিক বন্ধুরা নিশ্চয়ই বলবেন যে, আমি যা বলছি সে-সব জ্ঞানবিজ্ঞানের কথা নয়, সেরেফ কবিত্ব । বিজ্ঞানের কথা এই যে, যে আলোকে আমি সাদা বলছি, সেই হচ্ছে। এ বিশ্বের একমাত্ৰ অখণ্ড আলো ; সেই-সমস্ত আলো রিফ্র্যিাকটেড অর্থাৎ ব্যস্ত হয়েই আমাদের চোখে বহুরূপী হয়ে দাড়ায়। তথাস্তু। এই রিফ্র্যাকশনএর একধারে নিমিত্ত এবং উপাদান -কারণ হচ্ছে—পঞ্চভূতের বহিভূত ইথার-নামক রূপ-রস-গন্ধ-স্পৰ্শ-শব্দের অতিরিক্ত একটি পদার্থ। এবং এই হিল্লোলিত পদার্থের ধর্ম হচ্ছে- এই জড়াজগৎটাকে উৎফুল্ল করা, ৰূপান্বিত করা। রূপ ষে আমাদের স্কুল-শরীরের কাজে লাগে না, তার কারণ বিশ্বের স্কুল- শরীর থেকে তার উৎপত্তি হয় নি। আমাদের ভিতর যে সুন্ম-শরীর অর্থাৎ ইথার আছে, বাইরের রূপের স্পর্শে সেই সূক্ষ্ম-শরীর স্পন্দিত হয়, আনন্দিত হয়, পুলকিত হয়, প্ৰস্ফুটিত হয়। রূপজ্ঞানেই মানুষের জীবন্মুক্তি, অর্থাৎ স্কুল-শরীষ্মের বন্ধন হতে মুক্তি। রূপজ্ঞান হারালে মানুষ আজীবন পঞ্চভূতেরই দাসত্ব করবে। রূপবিদ্বেষটা হচ্ছে আত্মার প্রতি দেহের বিদ্বেষ, আলোর বিরুদ্ধে অন্ধকারের বিদ্রোহ। রূপের গুণে অবিশ্বাস করাটা নাস্তিকতার প্ৰথম সূত্ৰ । ର ইন্দ্ৰিয়জ বলে বাইরের রূপের দিকে পিঠা ফেরালে ভিতরের রূপের সাক্ষাৎ পাওয়া কঠিন ; কেননা, ইন্দ্ৰিয়ই হচ্ছে জড় ও চৈতন্যের একমাত্র বন্ধনসূত্র। এবং ঐ সুত্রেই রূপের জন্ম । অন্তরের রূপও যে আমাদের সকলের মনশ্চক্ষে ধরা পড়ে না, তার প্ৰমাণস্বরূপ একটা চলতি উদাহরণ নেওয়া যাক । রবীন্দ্ৰনাথের লেখার প্রতি অনেকের বিরক্তির কারণ এই যে, সে লেখার রূপ আছে। রবীন্দ্রনাথের অন্তরে ইথার আছে, তাই সে মনের ভিতর দিয়ে যে ভাবের আলো রিফ্র্যাকূটেড হয়ে আসে, তা ইন্দ্ৰধনুর বর্ণেরঞ্জিত ও ছন্দে মূর্ত হয়ে আসতে বাধ্য। স্কুলােদশীর স্কুলদািষ্টতে তা হয় অসত্য নয় অশিব বলে ঠেকা কিছু আশ্চৰ্য নয়।