পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/২৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

VO)O বীরবলের হালখাতা ‘সমালোচনা’ নাম দিতেন, তা হলে, আমার বিশ্বাস, বৃথা বাগাড়ম্বরে ‘আলোচনা’র ক্ষুদ্র দেহ আয়তনে বৃদ্ধিপ্ৰাপ্ত হয়ে এত গুরুভার হয়ে উঠত যে, উক্ত শ্রেণীর আর-পাঁচখানা বইয়ের মতো এখনিও বিস্মৃতির অতল জলে ডুবে যেত। এই দুটি শব্দের মধ্যে যদি একটি রাখতেই হয়, তা হলে ‘সম’ বাদ দিয়ে ‘আলোচনা” রক্ষা করাই শ্রেয়। যদিচ ও কথাটিকে আমি ইংরেজি criticism শব্দের ঠিক প্ৰতিবাক্য বলে মনে করি নে। আলোচনা মানে ‘আ’ অর্থাৎ বিশেষরূপে ‘লোচন’ অৰ্থাৎ ইক্ষণ । যে বিষয়ে সন্দেহ হয়, তার সন্দেহভঞ্জন করবার জন্য বিশেষরূপে সেটিকে লক্ষ্য করে দেখবার নামই আলোচনা। তর্কবিতর্ক বাগবিতণ্ডা আন্দোলন-আলোড়ন প্ৰভৃতি অর্থেও ঐ কথাটি আজকালকার বাংলাভাষায় ব্যবহৃত হয়ে থাকে। কিন্তু ও কথায় তার কোনো অর্থই 3ą3 “ TNÇarība” RRC si scrutinize *tri RefTSJ || Criticism শব্দের ঠিক প্ৰতিবাক্য বাংলা কিংবা সংস্কৃত ভাষায় না থাকলেও ‘বিচার’ শব্দটি অনেক পরিমাণে সেই অর্থ প্ৰকাশ করে । কিন্তু ‘সমালোচনা’র পরিবর্তে 'বিচার’ যে বাঙালি সমালোচকদের কাছে গ্ৰাহ হবে, এ আশা আমি রাখি নে। কারণ, এদের উদ্দেশ্যবিচার করা নয়, প্রচার করা। তাছাড়া যে কথাটা একবার সাহিত্যে চলে গেছে, তাকে আচল করবার প্রস্তাব অনেকে হয়তো দুঃসাহসিকতার পরিচয় বলে মনে করবেন। তার উত্তরে আমার বক্তব্য এই যে, পূর্বে যখন আমরা নির্বিচারে বহুসংখ্যক সংস্কৃত শব্দকে বঙ্গসাহিত্যের কারাগারে প্রবেশ করিয়েছি, এখন আবার সুবিচার করে তার গুটিকতককে মুক্তি দেওয়াটা বোধ হয়। অন্যায় কাৰ্য হবে না। আর-এক কথা। যদি criticism অর্থেই আমরা আলোচনা শব্দ ব্যবহার করি, তা হলে scrutinize অর্থে আমরা কী শব্দ ব্যবহার করব ? সুতরাং, যে উপায়ে আমরা মাতৃভাষার দেহপুষ্ট করতে চাই, তাতে ফলে শুধু তার অঙ্গহানি হয়। শব্দ সম্বন্ধে যদি আমরা একটু শুচিবাতিকগ্ৰস্ত হতে পারি, তা হলে, আমার বিশ্বাস, বঙ্গভাষার নির্মলতা অনেক পরিমাণে রক্ষিত হতে পারে। অনাবশ্যকে যদি আমরা সংস্কৃতভাষার উপর হস্তক্ষেপ করতে সংকুচিত হই, তাতে সংস্কৃতভাষার উপর অবজ্ঞা দেখানো হবে না, বরং তার প্রতি যথার্থ ভক্তিই দেখানো হবে। শব্দগৌরবে সংস্কৃতভাষা অতুলনীয়। কিন্তু তাই বলে তার ধ্বনিতে মুগ্ধ হয়ে আমরা যে শুধু তার সাহায্যে বাংলাসাহিত্যে ফাক আওয়াজ করব, তাও ঠিক নয়। বাণী কেবলমাত্র ধ্বনি নয়। আমি বহুদিন থেকে এই মত প্রচার করে আসছি, কিন্তু আমার কথায় কেউ কর্ণপাত করেন না। সাহিত্যজগতে একশ্রেণীর জীব বিচরণ করে, যাদের প্রাণের চাইতে কান বড়ো। সংগীতচর্চার লোভ তারা কিছুতেই সংবরণ করতে পারে না, এবং সে ব্যাপার থেকে তাদের নিরস্ত করবার ক্ষমতাও কারো