বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৪

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যে চাবুক সেদিন স্টার-থিয়েটারে ‘আনন্দ-বিদায়ে’র অভিনয় শেষে দক্ষযজ্ঞের অভিনয়ে পরিণত হয়েছিল শুনে দুঃখিত এবং লজ্জিত হলুম। তার প্রথম কারণ এই যে, শ্ৰীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের মতো লোককে দর্শকমণ্ডলী লাঞ্ছিত করেছেন ; এবং তার দ্বিতীয় কারণ এই যে, শ্ৰীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় শ্ৰীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে প্ৰকাশ্যে লাঞ্ছনা দেবার উদ্দেশ্যেই রঙ্গমঞ্চে আনন্দ-বিদায়ের অবতারণা করেছিলেন। দ্বিজেন্দ্রবাবু লিখেছেন যে, তিনি সকল রকম “মি’র বিপক্ষে। ন্যাকামি জ্যাঠামি ভণ্ডামি বোকামি প্ৰভৃতি যে-সকল 'মি'-ভাগান্ত পদার্থের তিনি উল্লেখ করেছেন, সেগুলির যে-কোনো ভদ্রলোকেই পক্ষপাতী, এরূপ আমার বিশ্বাস নয় ; অন্তত পক্ষপাতী হলেও সে কথা কেউ মুখে স্বীকার করবেন না। কিন্তু সমাজে থাকতে হলেই পাঁচটি ‘মি’নিয়েই আমাদের ঘর করতে হয়, এবং সেই কারণেই সুপরিচিত 'মি’গুলি, সাহিত্যে না হোক, জীবনে আমাদের সকলেরই অনেকটা সওয়া আছে। কিন্তু যা আছে, তার উপর যদি একটা নতুন ‘মি এসে আমাদের ঘাড়ে চাপে, তা হলে সেটা নিতান্ত ভয়ের বিষয় হয়ে ওঠে। আমরা এতদিন নিরীহ প্ৰকৃতির লোক বলেই পরিচিত ছিলুম। কিছুদিন থেকে DgOB LBD TD DDD SS DBDDB BDBBLDBBS BBDD BBDSS TD রাজনীতির রঙ্গভূমিতেই আমরা তার।পরিচয় পেয়েছি ; সুরাট-কনগ্রেসে সেই 'মি'র তাণ্ডবনৃত্যের অভিনয় হয়েছিল। আমার বিশ্বাস ছিল যে, সুরাটে যে যবনিকাপাতন হয়েছে, তা আর সহসা উঠবে না। কিন্তু এখন দেখতে পাচ্ছি যে, রাজনীতিতে প্ৰশ্ৰয় পেয়ে যণ্ডামি ক্রমশ সমাজের অপর-সকল দেশও অধিকার করে নিয়েছে। ষণ্ডামিজিনিসটের আর যে ক্ষেত্রেই সার্থকতা থাক, সাহিত্যে নেই; কেননা, সাহিত্যে বাহুবলের কোনো স্থান নেই। স্টার-থিয়েটারের বক্স হতে শ্ৰীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায়কে গায়ের জোরে নামানো সহজ, কিন্তু তিনি বঙ্গসাহিত্যে যে উচ্চ আসন লাভ করেছেন, বাহুবলে তঁাকে সেখান থেকে নামানো অসম্ভব। লেখকমাত্রেই নিন্দ প্ৰশংসা সম্বন্ধে পরাধীন। সমালোচকদের চোখ রাঙানি সহ্য করতে লেখকমাত্রেরই প্ৰস্তুত হওয়া আবশ্যক। কিন্তু সাহিত্যজগতের ঢ়িলাটে মারলে যে জড় জগতের পাটকেলটা আমাদের খেতে হবে, এমন কোনো কথা নেই। ওরকম একটা নিয়ম প্ৰচলিত হলে সাহিত্য রাজ্যে আমাদের বাস করা চলবে না। কারণ এ কথা সর্ববাদিসম্মত যে, বুদ্ধির জোর গায়ের জোরের কাছে বরাবরই হার মানে। এই কারণেই শ্ৰীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় যেভাবে লাঞ্ছিত হয়েছিলেন, তার জন্য আমি বিশেষ দুঃখিত এবং লজিত ।