বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৩৫

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

সাহিত্যে চাবুক voግ R কিন্তু শ্ৰীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় যে, এ যুগের সাহিত্যে আবার ‘কবির লড়াই' ফিরে আনবার প্রয়াস পেয়েছেন, তার জন্য আমি আরো বেশি দুঃখিত। ও কাজ একবার আরম্ভ করলে শেষটা খেউড় ধরতেই হবে। দ্বিজেন্দ্রবাবু বোধ হয় এ কথা অস্বীকার করবেন না যে, সেটি নিতান্ত অবাঞ্ছনীয়। এ পৃথিবীতে মানুষে আসলে খালি দুটি কাৰ্যই করতে জানে ; সে হচ্ছে হাসতে এবং কঁদিতে। আমরা সকলেই নিজে হাসতেও জানি, কঁদতেও জানি ; কিন্তু সকলেরই কিছু-আর অপরকে হাসাবার কিংবা কঁদাবার শক্তি নেই। অবশ্য অপরকে চপেটাঘাত করে কাদানো কিংবা কাতুকুতু দিয়ে হাসানো আমাদের সবারই আয়ত্ত, কিন্তু সরস্বতীর বীণার সাহায্যে কেবল দুটি-চারটি লোকই ঐ কাৰ্য করতে পারেন। যাদের সে ভগবৎ দত্ত ক্ষমতা আছে, তঁদেরই আমরা কবি বলে মেনে নিই। বাদবাকি সব বাজে লেখক। কাব্যে, আমার মতে শুধু তিনটিমাত্র রস আছে ; করুণ রস, হাস্যরস, আর হাসিকান্নামিশ্রিত মধুর রস। যে লেখায়। এর একটি-না-একটি রস আছে, তাই কাব্য ; বাদবাকি সব নীরস লেখা। দর্শন বিজ্ঞান ইত্যাদি যা খুশি তা হতে পারে, কিন্তু কাব্য নয়। বাংলাসাহিত্যে হাস্যরসে শ্ৰীযুক্ত দ্বিজেন্দ্রলাল রায় অদ্বিতীয়। তার গানে হাস্যরস ভাবে কথায় সুরে তালে লয়ে পকীকৃত হয়ে মূর্তিমান হয়ে উঠেছে। হাসির গান তঁর সঙ্গে জুড়িতে গাইতে পারে, বঙ্গসাহিত্যের আসরে এমন গুণী আর-একটিও নেই। কান্নার মতো হাসিরও নানাপ্রকার বিভিন্ন রূপ আছে, এবং দ্বিজেন্দ্রবাবুর মুখে হাসি নানা আকারেই প্ৰকাশ পেয়েছে। সাহিত্যে যে কেবল আমাদের মিষ্টি হাসিই হাসতে হবে, এ কথা আমি মানি নে। সুতরাং দ্বিজেন্দ্ৰবাবু যে বলেছেন যে, কাব্যে বিদ্রুপের হাসির ও ন্যায্য স্থান আছে, সে কথা সম্পূর্ণ সত্য। কিন্তু উপহাস জিনিসটের প্রাণই হচ্ছে হাসি। হাসি বাদ দিলে শুধু তার উপটুকু থাকে। কিন্তু তার রূপটুকু থাকে না। হাসতে হলেই আমরা অল্পবিস্তর দন্তবিকাশ করতে বাধ্য হই। কিন্তু দন্তবিকাশ করলেই যে সে ব্যাপারটা হাসি হয়ে ওঠে তা নয় : দাঁতখিচুনি বলেও পৃথিবীতে একটা জিনিস আছে- সে ক্রিয়াটি যে ঠিক হাসি নয়, বরং তার উলটো, জীবজগতে তার প্রকৃষ্ট প্রমাণ আছে। সুতরাং উপহায়ুজিনিসটে সাহিত্যে চললেও কেবলমাত্র তার মুখভঙ্গিটি সাহিত্যে চলে না। কোনো জিনিস দেখে যদি আমাদের হাসি পায়, তা হলেই আমরা অপরকে হাসাতে পারি। কিন্তু কেবলমাত্র যদি রাগই হয়, তা হলে সে মনোভাবকে হাসির ছদ্মবেশ পরিয়ে