丐颈西可 আমরা ইংরেজিজাতিকে কতকটা জানি, এবং আমাদের বিশ্বাস যে, প্রাচীন হিন্দুজাতিকে তার চাইতেও বেশি জানি ; আমরা চিনি নে শুধু নিজেদের। আমরা নিজেদের চেনবার কোনো চেষ্টাও করি নে, কারণ আমাদের বিশ্বাস যে, সে জানার কোনো ফল নেই; তা ছাড়া নিজেদের ভিতর জািনবার মতো কোনো পদার্থ আছে কি না, সে বিষয়েও অনেকের সন্দেহ আছে। বাঙালির নিজস্ব বলে মনে কিংবা চরিত্রে যদি কোনো পদার্থ থাকে, তাকে আমরা ডৱাই ; তাই চোখের আড়াল করে রাখতে চাই। আমাদের ধারণা যে, বাঙালি তার বাঙালিত্ব না হারালে আর মানুষ হয় না। অবশ্য অপরের কাছে তিরস্কৃত হলে আমরা রাগ করে ঘরের ভাত (যদি থাকে তো) বেশি করে খাই; কিন্তু উপেক্ষিত হলেই আমরা বিশেষ ক্ষুন্ন হই। মান এবং অভিমান এক জিনিস নয়। প্রথমটির অভাব হতেই দ্বিতীয়টি জন্মলাভ করে। আমরা যে নিজেদের মান্য করি নে, তার স্পষ্ট প্ৰমাণ এই যে, আমরা উন্নতি অর্থে বুঝি - হয় বর্তমান ইউরোপের দিকে এগানো, নয়। অতীত ভারতবর্ষের দিকে পিছনে। আমরা নিজের পথ জানি নে বলে আজও মনঃস্থির করে উঠতে পারি নি যে, পূর্ব এবং পশ্চিম এই দুটির মধ্যে কোন দিক অবলম্বন করলে আমরা ঠিক গন্তব্য স্থানে গিয়ে পৌছব। কাজেই আমরা ইউরোপীয় সভ্যতার দিকে তিন-পা এগিয়ে আবার ভারতবর্ষের দিকে দু-পা পিছিয়ে আসি, আবার অগ্রসর হই, আবার পিছু হট । এই কুর্নিশ করাটাই আমাদের নব-সভ্যতার ধর্ম ও কর্ম। উক্ত ক্রিয়াটি আমাদের পক্ষে বিশেষ গৌরবসূচক না হলেও মেনে নিতে হবে। যা মনে সত্য বলে জানি, সে-সম্বন্ধে মনকে চােখ ঠেরে কোনো লাভ নেই। আমরা দেটিানার ভিতর পড়েছি- এই সত্যটি সহজে স্বীকার করে নিলে আমাদের উন্নতির পথ পরিষ্কার হয়ে আসবে। যা আজ উভয়সংকট বলে মনে হচ্ছে, তাই আমাদের উন্নতির স্রোতকে একটি নির্দিষ্ট পথে বদ্ধ রাখবার উভয়কূল বলে বুঝতে পারব। আমরা যদি চলতে চাই তো আমাদের একুল-ওকুল দুকূল রক্ষা করেই চলতে হবে। আমরা স্পষ্ট জানি আর না-জানি, আমরা এই উভয় কুল অবলম্বন করেই চলবাৰু চেষ্টা করছি। সকল দেশেরই সকল যুগের একটি বিশেষ ধৰ্ম আছে। সেই যুগধর্ম অনুসারে চলতে পারলেই মানুষ সার্থকতা লাভ করে। আমাদের এ যুগ সত্যযুগও নয় কলিযুগ নয়- শুধু তরজমার যুগ। আমরা শুধু কথায় নয়, কাজেও একেলে
পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪১
অবয়ব