বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

88 বীরবলের হালখাতা বিদেশী এবং সেকেলে স্বদেশী সভ্যতার অনুবাদ করেই দিন কটাই। আমাদের মুখের প্ৰতিবাদও ঐ একই লক্ষণাক্ৰান্ত। আমরা সংস্কৃতের অনুবাদ করে নূতনের প্রতিবাদ করি, এবং ইংরেজির অনুবাদ করে পুরাতনের প্রতিবাদ করি। আসলে রাজনীতি সমাজনীতি ধর্ম শিক্ষা সাহিত্য-সকল ক্ষেত্রেই তরজমা করা ছাড়া আমাদের উপায়ান্তর নেই। সুতরাং আমাদের বর্তমান যুগটি তরজমার যুগ বলে গ্রাহ করে নিয়ে ঐ অনুবাদকার্যটি ষোলো আন ভালোরকম করার উপর আমাদের পুরুষাৰ্থ এবং কৃতিত্ব नेिछैद्ध क द्रgछ । পরের জিনিসকে আপনার করে নেবার নামই তরজমা । সুতরাং ও কাৰ্য করতে আমাদের কোনো ক্ষতি নেই, এবং নিজেদের দৈন্যের পরিচয় দেওয়া হয় মনে করেও লজ্জিত হবার কারণ নেই। কেননা, নিজের ঐশ্বৰ্য না থাকলে লোকে যেমন দান করতে পারে না, তেমনি নেবার যথেষ্ট ক্ষমতা না থাকলে লোকে গ্রহণও করতে পারে না । স্মৃতির মতে, দাতা এবং গ্রহীতার পরস্পর যোগ না হলে দানক্রিয়া সম্পন্ন হয় না। এ কথা সম্পূর্ণ সত্য। মৃত ব্যক্তি দাতাও হতে পারে না, গ্ৰহীতাও হতে পারে না ; কারণ দান এবং গ্ৰহণ উভয়ই জীবনের ধর্ম। বুদ্ধদেব যিশুখৃস্ট মহম্মদ প্রভৃতি মহাপুরুষদের নিকট কোটি কোটি মানব ধর্মের জন্য ঋণী। কিন্তু তঁদের দত্ত অমূল্য রত্ন তঁদের হাত থেকে গ্ৰহণ করবার ক্ষমতা কেবলমাত্র তাদের সমকালবতী জনকতক মহাপুরুষেরই ছিল। এবং শিষ্যপরম্পরায় তাদের মত আজ লক্ষ লক্ষ লোকের ঘরের সামগ্রী হয়ে উঠেছে। পৃথিবীতে গুরু হওয়া বেশি শক্ত, কিংবা শিষ্য হওয়া বেশি শক্ত, বলা কঠিন। র্যাদের বেদান্তশাস্ত্রের সঙ্গে স্বল্পমাত্রও পরিচয় আছে তঁরাই জানেন যে, পুরাকালে গুরুরা কাউকে ব্ৰহ্মবিদ্যা দান করবার পূর্বে শিষ্যের সে বিদ্যা গ্ৰহণ করবার উপযোগিতা সম্বন্ধে কিরূপ কঠিন পরীক্ষা করতেন। উপনিষদকে গুহ্যশাস্ত্র করে রাখবার উদ্দেশ্যই এই যে, যাদের শিষ্য হবার সামর্থ্য নেই, এমন লোকেরা ব্রহ্মবিদ্যা নিয়ে বিদ্যে ফলাতে না পারে। এ কথা সম্পূর্ণ সত্য যে, শক্তিমান গুরু হবার একমাত্র উপায় পূর্বে ভক্তিমান শিষ্য হওয়া। বর্তমান যুগে আমরা ভক্তিপদার্থটি ভুলে গেছি, আমাদের মনে আছে শুধু অভক্তি ও অতিভক্তি। এ দুয়ের একটিও সাধুতার লক্ষণ নয়, তাই ইংরেজি-শিক্ষিত লোকের পক্ষে অপর কাউকে শিক্ষা c\8 अनष्ठत । আমরা কথায় বলি, জ্ঞানলাভ করি ; কিন্তু আসলে জ্ঞান উত্তরাধিকারীস্বত্বে কিংবা প্ৰসাদস্বরূপে লাভ করবার পদার্থ নয়। আমরা সজ্ঞানে জন্মলাভ করি নে, কেবল উজ্ঞান অর্জন করবার ক্ষমতামাত্র নিয়ে ভূমিষ্ঠ হই। জানা-ব্যাপারটি মানসিক চেষ্টার