পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৪৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

3r বারবলের হালখাতা মোক্ষের অর্থ ছেড়ে দেওয়া, সুতরাং এ দুয়ের কাজ যে এক নয়, তা শুধু ইংরেজিনবিশ আৰ্য-সন্তানরাই বুঝতে পারেন না। গীতা আমাদের হাতে পড়বামাত্র তার হরিভক্তি উড়ে যায়। সেই কারণে শ্ৰীযুক্ত হীরেন্দ্রনাথ দত্ত ‘গীতায় ঈশ্বরবাদ"এর প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে নব্য পণ্ডিতসমাজে শুধু বিবাদ-বিসম্বাদের সৃষ্টি করেছিলেন। তার পর গীতার কর্ম ইংরেজি work-রূপ ধারণ করে আমাদের কাছে গ্ৰাহ হয়েছে ; অর্থাৎ কর্মকাণ্ডের কর্ম কাণ্ডহীন হয়েই আমাদের কাছে উচ্চ বলে গণ্য হয়েছে। এই ভুল তরজমার প্রসাদেই, যে কর্মের উদ্দেশ্য পরের হিত এবং নিজের আত্মার উন্নতিসাধন-পরলোকের অভু্যদয়ও নয়, সেই কৰ্ম আজকাল ইহলোকের অভু্যদয়ের জন্য ধর্ম বলে গ্ৰাহ হয়েছে। যে কাজ মানুষে পেটের দায়ে নিত্য করে থাকে, তা করা কর্তব্য- এইটুকু শেখাবার জন্য ভগবানের যে ভোগায়তন দেহ ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হবার আবশ্যকতা ছিল না-এ সোজা কথাটাও আমরা বুঝতে পারি নে। ফলে আমাদের-কৃত গীতার অনুবাদ বক্তৃতাতেই চলে, জীবনে কোনো कांख लिicों का । এক দিকে আমরা এ দেশের প্রাচীন মতগুলিকে যেমন ইংরেজি পোশাক পরিয়ে তার চেহারা বিলকুল বদলে দিই, তেমনি অপর দিকে ইউরোপীয় দৰ্শন-বিজ্ঞানকেও আমরা সংস্কৃতভাষার ছদ্মবেশ পরিয়ে লোকসমাজে বার করি। নিতাই দেখতে পাই যে, খাটি জার্মান মাল স্বদেশী বলে পাঁচজনে সাহিত্যের বাজারে কাটাতে চেষ্টা করছে । হেগেলের দর্শন শংকরের নামে বেনামি করে অনেকে কতক পরিমাণে অজ্ঞ লোকদের কাছে চালিয়েও দিয়েছেন। আমাদের মুক্তির জন্য হেগেলেরও আবশ্যক আছে, শংকরেরও আবশ্যক আছে ; কিন্তু তাই বলে হেগেলের মস্তক মুণ্ডন করে তঁকে আমাদের স্বহস্তেরচিত শত গ্ৰন্থিময় কন্থা পরিয়ে শংকর বলে সাহিত্যসমাজে পরিচিত করে দেওয়াতে কোনো লাভ নেই। হেগেলকে ফকির না করে যদি শংকরকে গৃহস্থ করতে পারি, তাতে আমাদের উপকার বেশি। বিজ্ঞান সম্বন্ধেও ঐরূপ ভুল তরজমা অনেক অনর্থ ঘটিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ ইভলিউশনের কথাটা ধরা যাক। ইভলিউশনের দোহাই না দিয়ে আমরা আজকাল কথাই কইতে পারি নে। আমরা উন্নতিশীল হই। আর স্থিতিশীলই হই আমাদের সকলপ্রকার শীলই ঐ ইভলিউশন আশ্রয় করে রয়েছে। সুতরাং ইভলিউশনের যদি আমরা ভুল অৰ্থ বুঝি, তা হলে আমাদের সকল কাৰ্যই ধে আরম্ভে পর্যবসিত হবে সে তো ধরা কথা। বাংলায় আমরা ইভলিউশন 'ক্রমবিকাশবাদ” ‘ক্রমোন্নতিবাদ’ ইত্যাদি দি শব্দে তরজমা করে থাকি। ঐ রূপ তরজমার ফলে আমাদের মনে এই ধারণা জন্মে গেছে যে,