পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৭৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

ዓኳም বীরবলের হালখাতা রহস্য করে যাদের মনোরঞ্জন করতে পারলুম না, স্পষ্ট কথা বলে যে তঁদের মনোরঞ্জন করতে পারব- এ হচ্ছে। আশা ছেড়ে আশা রাখা । আর, কথায় যদি মানুষের মনই না পাওয়া যায়, তা হলে সে কথা বিড়ম্বন মাত্র। ভয় তো ঐখানেই। সত্য কথা সুস্থ মনের পক্ষে আহার- রুচিকরও বটে, পুষ্টিকরও বটে, কিন্তু রুগণ মনের পক্ষে তা ঔষধ, তাতে উপকার যা তা পরে হবে- পেটে গেলে, তাও আবার যদি লাগে ; কিন্তু গলাধঃকরণ করবার সময় তা কটুকষায়। বাংলার মনোরাজ্যেও ম্যালেরিয়া যে মোটেই নেই, এরূপ আমার ধারণা নয়। সুতরাং সাদাভাবে সিধে কথা বলতে আমি ভয় পাই । রসিকতা ছাড়লে আমাকে ‘চিন্তাশীল” লেখক হতে হবে- অর্থাৎ অতি গম্ভীৱভাবে অতি সাধুভাষায় বার বার হয়কে নয় এবং নয়কে হয় বলতে হবে। কারণ, যা প্ৰত্যক্ষ তাকেই যদি সত্য বলি, তা হলে আর গবেষণার কী পরিচয় দিলুম। কিন্তু আমার পক্ষে ওরূপ করা সহজ নয়। ভগবান, আমার বিশ্বাস, মানুষকে চোখ দিয়েছেন চেয়ে দেখবার জন্য- তাতে ঠুলি পরিবার জন্য নয়। সে স্টুলির নাম দর্শন দিলেও তা অগ্ৰাহ। শুনতে পাই, চোখে ঠুলি না দিলে গোরুতে ঘানি ঘোরায় না। এ কথা যদি সত্য হয়, তা হলে র্যাত্মা সংসারের ঘানি ঘোরাবার জন্য ব্যস্ত, লেখকেরা তাদের জন্য সাহিত্যের ঠুলি প্ৰস্তুত করতে পারেন, কিন্তু আমি তা পারব না। কেননা, আমি ও-ঘানিতে নিজেকেও জুতে দিতে চাই নে, অপর কাউকেও নয়। আমি চাই অপরের চোখের সে ঠুলি খুলে দিতে ; শুধু শিং-বাঁকানোর ভয়ে নিরন্ত হই । ফলে দাঁড়াল এই যে, রসিকতা করা নিরাপদ নয়, আর সত্য কথা বলতে বিপদ আছে । দুটি-একটি উদাহরণ দিলেই বুঝতে পারবেন যে, আমি ঠিক কথা বলছি। বাঙালি যুবকের পক্ষে সমুদ্রযাত্রার পথে প্ৰতিবন্ধক যে ধর্ম নয়। কিন্তু অর্থ, এ প্ৰত্যক্ষ সত্য ; কারণ র্তাদের কাছে ধর্মের তত্ত্ব গুহায় নিহিত, এবং অর্ণবযানেরা যে পথে যাতায়াত করে ‘স এব। পন্থা’। অথচ এই কথা বলতে গেলে সমগ্ৰ ব্ৰাহ্মণ-মহাসভা এসে আমার ८ रूद् ८5 ।। স্নেহলতা যে-চিতায় নিজের দেহ ভস্মসাৎ করেছেন, সে-চিতার আগুনের আঁচ যে সমগ্র সমাজের গায়ে অল্পবিস্তর লেগেছে, সে-বিষয়ে আর সন্দেহ নেই। কারণ কুমারীদাহ-ব্যাপারটি এ দেশে নতুন, ও উপলক্ষে এখনো আমরা ঢাকঢোল বাজাতে শিখি নি। কিন্তু তাই বলে যাদের দেখা যাচ্ছে অত্যন্ত গাত্ৰজ্বালা হয়েছে, তারাও যে সেই চিতাভস্ম গায়ে মেখে বিৰাগী হয়ে যাবেন, এরূপ বিশ্বাস আমাৱ নয়।