পাতা:বীরবলের হালখাতা - প্রমথ চৌধুরী.pdf/৮২

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটির মুদ্রণ সংশোধন করা প্রয়োজন।

byr 8 বীরবলের হালখাতা ওস্তাদ- এর প্রমাণ জীবনে ও সাহিত্যে নিত্য পাওয়া যায়। স্ত্রী-নিন্দুকের রাজা হচ্ছেন রাজকবি ভর্তুহরি ও রাজকবি সোলোমন। চরম ভোগবিলাসে পরম চরিতার্থতা লাভ করতে না পেরে এরা শেষবয়সে স্ত্রীজাতির উপর গায়ের ঝাল ঝেড়েছেন । যারা বনিতাকে মাল্যচন্দন হিসাবে ব্যবহার করেন, তারা শুকিয়ে গেলে সেই বনিতাকে মাল্যচন্দনের মতোই ভূতলে নিক্ষেপ করেন, এবং তাকে পদদলিত করতেও সংকুচিত হন না। প্ৰথমবয়সে মধুর রস অতিমাত্রায় চর্চা করলে শেষবয়সে জীবন তিতে হয়ে ওঠে। এ শ্রেণীর লোকের হাতে শৃঙ্গার-শতকের পরেই বৈরাগ্য-শতক রচিত হয়। একই কারণে, যারা যৌবনকে কেবলমাত্র ভোগের উপকরণ মনে করেন, তাদের মুখে যৌবন-নিন্দ লেগে থাকবারই কথা। যারা যৌবন-জোয়ারে গা ভাসিয়ে দেন, তারা ভাটার সময় পাকে পড়ে গত জোয়ারের প্রতি কটুকটব্য প্রয়োগ করেন। যৌবনের উপর তাদের রাগ এই যে, তা পালিয়ে যায় এবং একবার চলে গেলে আর ফেরে না। যযাতি যদি পুরুর কাছে ভিক্ষা করে যৌবন ফিরে না পেতেন, তা হলে তিনি যে কাব্য কিংবা ধর্মশাস্ত্র রচনা করতেন, তাতে যে কী সুতীব্র যৌবননিন্দা থাকত— তা আমরা কল্পনাও করতে পারি নে। পুরু যে পিতৃভক্তির পরিচয় দিয়েছিলেন, তার ভিতর পিতার প্রতি কতটা ভক্তি ছিল এবং তাতে পিতারই যে উপকার করা হয়েছিল, তা বলতে পারি নে, কিন্তু তাতে দেশের মহা অপকার হয়েছে ; কারণ নীতির একখানা বড়ো গ্ৰন্থ মারা গেছে। যযাতি-কাজ্যিক্ষত যৌবনের বিরুদ্ধে প্ৰধান অভিযোগ এই যে, তা অনিত্য। এ বিষয়ে ব্ৰাহ্মণ ও শ্রমণ, নগ্নক্ষপণক ও নাগরিক, সকলেই একমত। যৌবন ক্ষণস্থায়ী, এই আক্ষেপে এ দেশের কাব্য ও সংগীত পরিপূর্ণ “ফাগুন গায়ী হয়, বহুৱা ফিরি। আয়ী হয় গয়ে রে যৌবন, ফিরি আওত নাহি এই গান আজও হিন্দুস্থানের পথে-ঘাটে অতি করুণ সুরে গাওয়া হয়ে থাকে। যৌবন যে চিরদিন থাকে না, এ আপসেস রাখবার স্থান ভারতবর্ষে নেই। যা অতি প্রিয় এবং অতি ক্ষণস্থায়ী, তার স্থায়িত্ব বাড়াবার চেষ্টা মানুষের পক্ষে স্বাভাবিক। সম্ভবত নিজের অধিকার বিস্তার করবার উদ্দেশ্যেই এ দেশে যৌবন শৈশবের উপর আক্রমণ করেছিল। বাল্যবিবাহের মূলে হয়তো এই যৌবনের মেয়াদ বাড়াবার ইচ্ছাটাই বর্তমান। জীবনের গতিটি উলটো দিকে ফেরাবার ভিতরও একটা মহা আর্ট আছে। পৃথিবীর অপর-সব দেশে লোকে গাছকে কী করে বড়ো করতে