পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১১৬

উইকিসংকলন থেকে
পরিভ্রমণে চলুন অনুসন্ধানে চলুন
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

তরসার পুবপারে রাজাদের জলকরে পানিকাক হাঁকলে—“বক্সাও।” আরও দূরে জলপাইগুড়ির সীমানায় তিতিরে হাঁকলে—“জয়িন্তি।”

 জলপাইগুড়ি ছাড়িয়ে গোয়ালপাড়ার মোচু নদীর কাছ বরাবর এসে হাঁসেরা আকাশ মেঘে অন্ধকার দেখলে, জোর বাতাস তাদের ক্রমেই উত্তরে পাহাড়ের গায়ে ঠেলে নিয়ে চলল। হাঁসেরা এঁকে-বেঁকে কখনো উত্তর ঘেঁষে একেবারে হিমালয়ের দেওয়ালের ধার দিয়ে কখনো দক্ষিণে ফাঁকা মাঠের উপর দিয়ে উড়ে চলল, সারাদিন।

 গোয়ালপাড়া ছাড়িয়ে কামরূপ মানস নদীর কাছ বরাবর এসেছে, এমন সময় পশ্চিম দিকে বোঁ-বোঁ সোঁ-সোঁ শব্দ উঠল যেন হাজার-হাজার পাখি উড়ে আসছে। পায়ের তলার মানস নদীর জল হঠাৎ কালো ঘোরাল হয়ে উঠল, দমকা হাওয়ার একটা ঝাপটা এসে হাঁসেদের ডানার পালকগুলো উস্কোখুস্কো করে দিলে।

 চকা ঝপ করে ডানা বন্ধ করে পলকের মতো চমকে যেন আকাশে স্থির হয়ে দাঁড়াল তারপরে তীরের মতে মানস নদীর দিকে নেমে চলল, ডাক দিতে-দিতে—“সামাল জমি লাও জমি লাও।” কিন্তু জমি নেবার আগেই ঝড় একেবারে ধুলো বালি শুকনো পাতা ছোট-ছোট পাখিদের ঠেলতে-ঠেলতে তরতর করে এসে পড়ল। বাতাসে জোরে মাঝ-দরিয়ার দিকে চকা নিকোবরের দলকে ঠেলে নিতে লাগল, জমি নেবার উপায় নেই। মানস নদীর পশ্চিম কূলে বিজলী-গাঁয়ের উপর দিয়ে ঠেলতে-ঠেলতে বাতাস হাঁসের দলকে দেখতে-দেখতে মাঝ-দরিয়ায় নিয়ে আসছে, সামনে মানস নদীর ওপারের ভাঙন-জমি পাহাড়ের মতে উঁচু, সেখানে হাওয়া যদি আছড়ে ফেলে, তবে একটি হাঁসও বাঁচবে না। ঘোরবারও উপায় নেই, ওদিকে মাঝনদীতে তুফান উঠেছে, ঝড়ের মুখে উড়ে গিয়ে সামনের ভাঙনে আছড়ে পড়লে মৃত্যু নিশ্চয়, তার চেয়ে জলে পড়ে বরং সাঁতরে বাঁচবার

১১৮