পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৪৮

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

আস্তে-আস্তে সভা ছেড়ে যে যার বাসায় যাবার উদ্যোগ করলে। এদের রকম দেখে চকার এমনি রাগ হচ্ছিল যে সব কটাকে ঠেলে সে চুয়োদের মুখে ফেলে দেয়, বিশেষ ওই একঠেঙ্গে হাড়গিলেটাকে এক ধাক্কায় নাটবাড়ির চুড়ো থেকে একেবারে নিচে ফেলে দেবার জন্যে চকা নিসপিস করতে লাগল।

 রিদয় তাকে চোখ টিপে বললে—“চুয়োদের জব্দ করা শক্ত নয়, যদি নাটবাড়ির ঠাকুরঘরের লক্ষ্মী পেঁচা আমাকে এখনি একবার ঠাকুরঘরে যে দুয়োরের উপরে কুলুঙ্গীতে গণেশ বসে আছেন তাঁর কাছে নিয়ে যান!”

 ভুতুম অমনি তাড়াতাড়ি লক্ষ্মী পেঁচাকে ডেকে আনলে। রিদয় লক্ষ্মী পেঁচাকে গণেশের কথা শুধোতে সে বললে—“ঠাকুর তো এখন শয়ন করেছেন, ঠাকুরঘরের দরজা বন্ধ!”

 রিদয় চকার সঙ্গে চুপিচুপি দু-একটা কথা বলাবলি করে পেঁচাকে বললে—“পুরোনো দরজা খুলে নিতে কতক্ষণ? চল, পথ দেখাও!”

 লক্ষ্মী পেঁচা আগে পথ দেখিয়ে চলল, সঙ্গে রিদয়।

 চকা বললে—“এই ভূতচতুর্দশীর রাত্রে পোড়ো বাড়িতে একা তোমার সঙ্গে যেতে দিতে মন সরছে না—যদি পেঁচোয় পায়, আমাকেও সঙ্গে যেতে হল।”

 হাড়গিলে অমনি তাড়াতাড়ি বলে উঠলেন—“না-না, সে হতে পারে না, তুমি গেলে গোল হবে, বুরুঞ্জিতে লিখছে এই ভূতচতুর্দশীতে একা এই অঙ্গুলি প্রমাণ মানুষটি এসে নাটবাড়িতে মূষিকদের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে হাড়গিলে বংশের সুখসৌভাগ্য বৃদ্ধি করবেন। তুমি গেলে শাস্ত্রের কথা মিথ্যা হয়ে যায়। এই নাও শনিবার অমাবস্যাতে তোলা এই মানকচুর শিকড় সঙ্গে রাখ, ভূত পালাবে।” বলে রিদয়ের হাতে হাড়গিলে তার বাসার ছেঁড়া মাদুর একটু ভেঙে দিয়ে তার কানে মন্তর দিলেন।

১৫০