বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৬

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 ধলা গাই, কপ্‌লে গাই, কালো গাই—তিন গাই গোয়ালে বাঁধা। রিদয় কাছে আসতেই এই তিন গাই এমনি দাপাদাপি হামাহামি শুরু করে দিলে যে মনে হল তিরিশটা ষাঁড় সেখানে হুটোপাটি লাগিয়েছে! রিদয় শুনলে ধলা বলছে—“হবে না? মাথার উপর ধর্ম আছেন। হুঁ হুঁ!”

 কপ্‌লে গাই বললে—“আমার কানে বোলতা ছাড়া? হুঁ হুঁ!”

 এই সময় রিদয়কে গোয়ালের দুয়োরে দেখে কালো গাই লাথি ছুঁড়ে বললে—“খবরদার! দেখেছ, এক লাথিতে মাথার খুলি ফাটিয়ে দেব।”

 ধলা বললে—“আয় না, এইবার শিং ধরে নাড়া দিবি!”

 কপ্‌লে বললে—“একবার বোলতা নিয়ে কাছে এস না, মজাটা টের পাইয়ে দিচ্ছি!”

 কালো—সে সব-চেয়ে বুড়ি, সব-চেয়ে জোরালো গাই, সে বললে—“বড় যে আমাকে ঢিল মারা হত। আবার সেদিন আমাকে জুতো ছুঁড়ে মারা হয়েছিল! আয়, একবার আমার খুরের ঘা খেয়ে যা! রোজ দুধ-দুইবার সময় দুধের কেঁড়ে উল্টে দিয়ে মাকে নাস্তানাবুদ করে তবে ছাড়তিস। আহা, এমন দিন নেই যে তিনি তোর জন্য না কেঁদেছেন। আয়, আজ একবার তার শোধ তুলব। বাপরে বাপ, কি দুষ্টু ছেলে গো! গণেশঠাকুর—তাঁর সঙ্গে লাগা!”

 রিদয় গরুদের সঙ্গে ভাব করে বলতে চাইছিল—যদি তারা গণেশঠাকুরকে দেখিয়ে দেয়, তবে কোনোদিন আর সে কারো কাছে কোনো অপরাধ করবে না; কিন্তু গাই তিনটে এমনি ঝাঁপাঝাঁপি আরম্ভ করলে যে রিদয়ের ভয় হল যদি দড়ি ছিঁড়ে এরা বেরোয়, তবে আর রক্ষে রাখবে না! সে আস্তে-আস্তে গোয়াল ছেড়ে সরে পড়ল।

 পশু-পাখি কেউ তাকে তো দয়া করলে না! গণেশের দেখা যদিই বা পাওয়া যায়, তবে তিনিও যে এদেরই মতো তাকে খেদিয়ে দেবেন না,
১৮