বিষয়বস্তুতে চলুন

পাতা:বুড়ো আংলা-অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর.djvu/১৯

উইকিসংকলন থেকে
এই পাতাটিকে বৈধকরণ করা হয়েছে। পাতাটিতে কোনো প্রকার ভুল পেলে তা ঠিক করুন বা জানান।

 গুগলী বললে—“ওহান থিকে না হয় বড় জোর একটা দিন লাগুক। পুকুরের ওপারটাতেই তো সুমুদ্দুর!”

 রিদয় হেসে বললে—“তবেই হয়েছে! পুকুরের ওধারে পুকুরের পাড়, তারপরে সবজী-ক্ষেত, তার ওধারে তেপান্তর মাঠ, মাঠের ওধারে সব গ্রাম। গ্রামের পর বন, বনের পর নদী, নদীর ওপারে নগর, নগরের পরে উপনগর, তার পরে উপবন, উপবনের পরে উপদ্বীপ, তারপর উপসাগরের উপকূল, তারপর উপসাগর—যেখানে গঙ্গার স্রোত গিয়ে পড়েছে। দেড়-দিন কি, দেড়-বছরে সেখানে পৌঁছতে পারেন কি না সন্দেহ। কেন মিছে হাঁটছেন? নিজের ঘরে ফিরে যান!”

 গুগলী ভাবলে রিদয় তার সঙ্গে মস্কারা করছে। সে আকাশে নাক তুলে বললে—“আর তুমি ভাবছ দিন চারেকে কৈলাস-পর্বতে যাবা—এই পিঁপড়ার মতো সরু–সরু ঠ্যাং চালিয়ে? যদি দিন রাত চলি যাতি পার, তথাপি চার-বছরে তুমি সেহানে পৌঁছতি পার কিনা সন্দেহ। এই আমতলি, ইহার পর জামতলি, তেঁতুলতলি, বটতলি—অমনি পর-পর কত যে গ্রাম তার ঠিকানা মেলে না। তারপরে নদীর ধারে এ-নগর, সে-নগর; উপনদীর ধারে সকল উপনগর; তৎপরে এ-ঘাট, ও-ঘাট, সে-ঘাট; এ-মাঠ, ও-মাঠ, সে-মাঠ; এ-বন, ও-বন, সে-বন; তাহার পর উপত্যকা, উপত্যকা বাদ পাহাড়তলী, তৎপরে চিত্রকূট, ত্রিকূট, পরেশনাথ, চন্দ্রনাথের পাহাড়-পর্বত; তাহার পর বিন্ধ্যাচল, তাহার পর সীমাচল তবে হিমাচল! তৎপরে রামগিরি, তাহার পরে ধবলগিরি, তৎপরে মানস-সরোবর, উহার ওধারে তিব্বত, আরো ওধারে কৈলাস–পর্বত। এই নদ-নদী পাহাড়-জঙ্গল ভাংতি-ভাংতি সেহানে যাওয়া গঙ্গা-ফড়িংটির-প্রায়—তোমার কর্ম! পক্ষীরাজ-ঘোড়া যে, সেও সেহানে যাতি পারে না চারি হপ্তায়, তুমি তো তুমি! ঘরের ছেলে ঘরে গিয়া বৈসা থাহ; কৈলাসের আশা ছাড়ি দ্যেও।”


২১